কোমরব্যথা থেকে ধরা পড়ে প্রস্টেট ক্যান্সার! কতটা সত্য?

 



প্রস্টেট ক্যান্সার পুরুষদের অন্যতম সাধারণ ক্যান্সার, বিশেষত যুক্তরাষ্ট্রে। মূত্রাশয়ের নিচে অবস্থিত প্রজননগ্রন্থি ‘প্রস্টেট’-এ কোষের অস্বাভাবিক বৃদ্ধি থেকেই এ ক্যান্সারের সূত্রপাত। সাম্প্রতিক আমেরিকান ক্যান্সার সোসাইটির রিপোর্ট বলছে, ২০০৭ থেকে ২০১৪ সাল পর্যন্ত প্রস্টেট ক্যান্সারের হার প্রতিবছর গড়ে ৬ দশমিক ৪ শতাংশ কমলেও, ২০১৪ থেকে ২০২১ সালে তা আবার বছরে ৩ শতাংশ হারে বেড়েছে। উদ্বেগজনকভাবে, এর মধ্যে অগ্রসর পর্যায়ের ক্যান্সার আরও দ্রুত বেড়েছে।প্রস্টেট ক্যান্সারের অন্যতম জটিল দিক হলো এর নীরব অগ্রযাত্রা। প্রাথমিক পর্যায়ে সাধারণত কোনো উপসর্গ থাকে না। তবে, যখন এটি ছড়িয়ে পড়ে, তখন অন্যতম লক্ষণ হয়ে দাঁড়ায় কোমরব্যথা। অথচ কোমরব্যথা বিশ্বজুড়ে অন্যতম সাধারণ সমস্যা, যা আমরা বেশিরভাগ সময়ই ভেবে নিই খারাপ ভঙ্গি, মাংসপেশির টান বা ডিস্ক স্লিপের কারণে। কিন্তু কখনো কখনো এই ব্যথা ইঙ্গিত দেয় ভয়াবহ কিছু—যেমন প্রস্টেট ক্যান্সার।

প্রস্টেট ক্যান্সার ও কোমরব্যথার সংযোগ

প্রাথমিক পর্যায়ে প্রস্টেট ক্যান্সারে ব্যথা হয় না। কিন্তু ক্যান্সার যখন অগ্রসর হয়ে হাড়ে ছড়িয়ে পড়ে, বিশেষত মেরুদণ্ড, নিতম্ব বা পাঁজরে, তখন তা হাড়ে ব্যথা সৃষ্টি করে। এই ব্যথা অনেক সময় রাতে বাড়ে, নড়াচড়ায় তীব্র হয়, কিংবা পায়ের দিকে ছড়িয়ে পড়ে। গবেষণায় দেখা গেছে, প্রস্টেট ক্যান্সার মেরুদণ্ডে ছড়িয়ে পড়লে প্রায় ৯৩ শতাংশ রোগী প্রথমে কোমরব্যথার অভিযোগ ককিছু ক্ষেত্রে বড় টিউমার আশপাশের টিস্যুতে চাপ সৃষ্টি করে বা প্রদাহের কারণে স্নায়ু উত্তেজিত হয়ে কোমর বা নিতম্বে ব্যথার অনুভূতি দেয়। তবে এগুলো হাড়ে ছড়ানো ক্যান্সারের তুলনায় কম স্পষ্ট ও কম ঘন ঘন দেখা যায়।

বিভ্রান্তি কোথায়?

কোমরব্যথা এতটাই সাধারণ যে এর বেশিরভাগই ক্যান্সারের সঙ্গে সম্পর্কিত নয়। পেশি বা লিগামেন্ট টান, ডিস্কের ক্ষয়, স্পাইনাল আর্থ্রাইটিস, স্নায়ুচাপ, সায়াটিকা কিংবা কিডনির সমস্যা থেকেও এমন ব্যথা হতে পারে। তাই কেবল কোমরব্যথার ভিত্তিতে প্রস্টেট ক্যান্সার সন্দেহ করা ঠিক নয়।

যেসব সতর্ক সংকেত খেয়াল রাখবেন

চিকিৎসকেরা বলছেন, কয়েকটি বৈশিষ্ট্য থাকলে সতর্ক হওয়া জরুরি। যেমন—হঠাৎ শুরু হওয়া এবং বিশ্রামেও না কমা ব্যথা, রাতে ঘুম ভেঙে দেওয়া ব্যথা, অবশভাব, পায়ে ঝিনঝিন, দুর্বলতা বা হাঁটতে সমস্যা, মূত্র বা মলত্যাগের অভ্যাসে পরিবর্তন, হঠাৎ মূত্র ধরে রাখতে না পারা, অযৌক্তিক ওজন কমে যাওয়া, অতিরিক্ত ক্লান্তি। এসবই হতে পারে মেরুদণ্ডে ক্যান্সার ছড়িয়ে পড়ার লক্ষণ।

চিকিৎসা ও ব্যথা নিয়ন্ত্রণ

যদি কোমরব্যথা প্রস্টেট ক্যান্সারের কারণে হয়, তবে চিকিৎসা দুই ধাপে হয়। প্রথমত, ক্যান্সার নিয়ন্ত্রণে হরমোন থেরাপি, রেডিয়েশন, কেমোথেরাপি বা লক্ষ্যভিত্তিক ওষুধ প্রয়োগ করা হয়। এতে টিউমারের বৃদ্ধি কমে ও ব্যথা হ্রাস পায়। দ্বিতীয়ত, ব্যথা কমাতে ও জীবনযাত্রার মান বজায় রাখতে ওষুধ, হাড় মজবুত করার ওষুধ, আক্রান্ত স্থানে রেডিয়েশন, প্রয়োজনে সার্জারি ও ফিজিক্যাল থেরাপি দেওয়া হয়।

কখন চিকিৎসকের শরণাপন্ন হবেন

যাদের বয়স বেশি, পরিবারে প্রস্টেট ক্যান্সারের ইতিহাস আছে বা আফ্রিকান বংশোদ্ভূত পুরুষরা বেশি ঝুঁকিতে। তাই নিয়মিত স্ক্রিনিং, বিশেষত পিএসএ (Prostate-Specific Antigen) টেস্ট জরুরি। পাশাপাশি, উপরে বর্ণিত সতর্ক সংকেতগুলোর সঙ্গে কোমরব্যথা থাকলে দ্রুত বিশেষজ্ঞ চিকিৎসকের শরণাপন্ন হওয়া উচিত।

কোমরব্যথা আমাদের সবার কাছেই পরিচিত সমস্যা হলেও কখনো কখনো এর আড়ালে লুকিয়ে থাকতে পারে প্রাণঘাতী প্রস্টেট ক্যান্সার। তাই ঝুঁকি ও সতর্ক সংকেতগুলোকে হালকাভাবে না নিয়ে সচেতন হওয়া, নিয়মিত পরীক্ষা করা এবং প্রয়োজনে দ্রুত চিকিৎসকের পরামর্শ নেওয়াই বুদ্ধিমানের কাজ।

Countdown Timer

Post a Comment

Previous Post Next Post