নারায়ণগঞ্জ শহরের বাবুরাইল বৌ বাজার এলাকায় নিজ ফ্ল্যাট বাসা থেকে স্বামী-স্ত্রী ও তাদের চার বছর বয়সের শিশু সন্তানের মরদেহ উদ্ধার করেছে পুলিশ। সোমবার (১৫ সেপ্টেম্বর) সন্ধ্যায় ভাড়া বাসার দরজা ভেঙে তিনজনের মরদেহ উদ্ধার করা হয়আর্থিক ঋণ ও মানসিক চাপের কারণে স্ত্রী এবং একমাত্র সন্তানকে হত্যার পর স্বামী গলায় ফাঁস দিয়ে আত্মহত্যা করেছে বলে প্রাথমিকভাবে ধারণা পুলিশের।
নিহতরা হলেন- হাবিবুল্লাহ শিপলু (৩৫), তার স্ত্রী মোহিনী আক্তার মীম (২৬) ও চার বছর বয়সী তাদের একমাত্র ছেলে সন্তান আফরান।
পারিবারিক সূত্রে জানা গেছে, গত ছয় বছর আগে প্রেমের সম্পর্কে বিয়ে করেছিলেন শিপলু ও মীম। তাদের দুজনের পরিবার দীর্ঘদিন ধরে ওই এলাকাতেই থাকেন।
স্বজনরা জানান, রোববার (১৪ সেপ্টেম্বর) রাত বারোটায় খাবার খেয়ে নিজের বড় ভাই লাভলু ও শ্যালক মারুফকে ফোন করে শেষবারের মতো কথা বলেন হাবিবুল্লাহ শিপলু। এরপর থেকে শিপলুর মোবাইল ফোন বন্ধ থাকে। সোমবার দুপুর গড়িয়ে বিকেল চারটা বেজে গেলেও তাদের ফ্ল্যাটে কোনো সাড়া শব্দ না পেয়ে প্রতিবেশীরা বিষয়টি শিপলু ও তার স্ত্রী মোহিনী আক্তার মীমের আত্মীয়-স্বজনকে ফোন করে পরে দুই পরিবারের লোকজন এসে ফ্ল্যাটের দরজা ভেঙে দুটি রুমে তিনজনের মরদেহ দেখতে পান। একটি রুমে শিপলুর ঝুলন্ত মরদেহ এবং পাশের রুমে খাটের উপর ছিল স্ত্রী মীম ও ছেলে আফরানের মরদেহ। খবর পেয়ে সন্ধ্যায় সদর মডেল থানা পুলিশ তাদের মরদেহ উদ্ধার করে ময়নাতদন্তের জন্য শহরের জেনারেল হাসপাতাল মর্গে প্রেরণ করে।
এসময় ঘটনাস্থল পরিদর্শন করেন জেলা পুলিশের অতিরিক্ত পুলিশ সুপার (অপরাধ) তারেক আল মেহেদী ও সদর মডেল থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মো. নাসির উদ্দিন।
এলাকাবাসী জানান, গত পাঁচ বছর আগে বৌ বাজার এলাকায় স্থানীয় রমজান আলীর মালিকানাধিন সম্মিলিত সঞ্চয় তহবিল নামে একটি সমিতির অফিসে ম্যানেজার হিসেবে চাকরি করতেন শিপলু। ওই সময় রমজান আলী শতাধিক গ্রাহকের প্রায় কোটি টাকা আত্মসাত করে সমিতির অফিস বন্ধ করে পালিয়ে যান। এ ঘটনায় রমজান আলীর বিরুদ্ধে মামলাও হয়। তবে গ্রাহকরা তাদের পাওনা টাকা না পেয়ে ম্যানেজার শিপলুকে নানাভাবে চাপ দিতেন। এরপর থেকে শিপলু মানসিক অশান্তিতে ছিলেন এবং আত্মহত্যার পথ বেছে ঘটনাস্থল পরিদর্শন শেষে অতিরিক্ত পুলিশ সুপার (অপরাধ) তারেক আল মেহেদী সাংবাদিকদের বলেন, ‘শিপলুর পরিবার ও এলাকাবাসীর কাছ থেকে জানতে পেরেছি শিপলু দীর্ঘদিন আগে স্থানীয় একটি সমিতিতে চাকরি করতেন। সমিতির মালিক রমজান আলী অনেকের টাকা আত্মসাত করে পালিয়ে যায়। এ ঘটনায় মামলাও হয়েছে। তবে গ্রাহকরা টাকা না পেয়ে শিপলুকে নানাভাবে চাপ দিতো।’
জেলা পুলিশের এই কর্মকর্তা আরও বলেন, প্রাথমিকভাবে আমরা ধারণা করছি মানসিক হতাশাগ্রস্থ থেকে স্ত্রী ও সন্তানকে বালিশ চাপা দিয়ে হত্যার পর শিপলু গলায় ফাঁস দিয়ে আত্মহত্যা করেছে। দুই পরিবারের লোকজন নিজেরাই দরজা ভেঙে তাদের তিনজনের মরদেহ দেখতে পেয়েছে। স্বামী-স্ত্রী দুই পরিবারের কোনো অভিযোগ না থাকায় এ ঘটনায় অপমৃত্যু মামলা হবে।’নেন।জানান।
Post a Comment