আবু জর গিফারি (রা.)-কে রাসুলুল্লাহ (সা.) জীবন বদলে দেওয়া সাত উপদেশ দিয়েছিলেন। সেগুলোর মধ্যে আমাদের জন্য আছে উত্তম শিক্ষা। প্রখ্যাত হাদিসগ্রন্থ মুসনাদ আহমাদের ২১৪১৫ নম্বর হাদিসে আবু জর (রা.)-কে দেওয়া রাসুল (সা.)-এর সাতটি গুরুত্বপূর্ণ নির্দেশ উল্লিখিত আছে। এই সাত আদেশ বর্তমান যুগেও আমাদের নৈতিক, সামাজিক ও আধ্যাত্মিক জীবনের দিশারি।উপদেশগুলো হলো—
১. মিসকিনদের ভালোবাসবে এবং তাদের সাহচর্য লাভ করবে
রাসুল (সা.) বলেছেন : ‘আমাকে মিসকিনদের ভালোবাসতে এবং তাদের সাহচর্য লাভ করতে বলেছেন।’ এ সম্পর্কে আল্লাহ বলেন, ‘আমিই দুনিয়ার জীবনে তাদের মধ্যে তাদের জীবিকা বণ্টন করে দিই এবং তাদের একজনকে অপরজনের ওপর মর্যাদা উন্নীত করি, যাতে একে অপরকে অধীন হিসেবে গ্রহণ করতে পারে।’ (সুরা : জুখরুফ, আয়াত : ৩২)
এটি আমাদের মনে করায় যে সমাজের দরিদ্র ও অসহায় মানুষদের পাশে থাকা এবং তাদের সহায়তা করা আমাদের নৈতিক দায়িত্ব। ছোট দান ও প্রিয় আচরণের মাধ্যমে আমরা তাদের জীবনে আলোর সঞ্চার ঘটাতে ২. নিজের চেয়ে নিম্নস্তরের মানুষের দিকে তাকাবে
রাসুল (সা.) আমাকে নির্দেশ করেছেন : ‘যে ব্যক্তির অবস্থান আমার চেয়ে নিচে, তার দিকে নজর রাখতে বলেছেন, এবং যে আমার চেয়ে ওপরে তার দিকে নয়।’ এটি অহংকার ও হিংসা থেকে রক্ষা করে। আল্লাহর বাণী, ‘আমি পরীক্ষা করার উদ্দেশ্যে তাদের বিভিন্ন শ্রেণিকে পার্থিব জীবনের চাকচিক্যস্বরূপ যেসব ভোগের সামগ্রী দিয়েছি তুমি সেগুলোর দিকে দৃষ্টি দিয়ো না।’ (সুরা : ত্বাহা, হাদিস : ১৩১)
৩. কেউ উপেক্ষা করলেও আত্মীয়তার সম্পর্ক বজায় রাখবে
রাসুল (সা.) বলেছেন : ‘আমাকে আত্মীয়দের সঙ্গে সম্পর্ক বজায় রাখতে বলেছেন, যদিও তারা আমাকে উপেক্ষা করে।
’ দীর্ঘমেয়াদি আত্মীয়তা সম্পর্ক রক্ষা এবং আত্মীয়দের সঙ্গে সৌহার্দ্য বজায় রাখা রাসুল (সা.)-এর মূলনীতি। রাসুল (সা.) আরো বলেন : ‘যে ব্যক্তি চায় তার রিজিক প্রসারিত হোক এবং তার বয়স দীর্ঘায়িত হোক, সে আত্মীয়তার সম্পর্ক বজায় রাখুক।’ (বুখারি, হাদিস : ৫৬৪০)
৪. আল্লাহ ছাড়া কারো কাছে প্রার্থনা করবে না
রাসুল (সা.) বলেছেন : ‘আমি যেন কারো কাছ থেকে কিছু না চাই।’ এটি আত্মনির্ভরশীলতা ও উচ্চ ব্যক্তিত্ব শিক্ষা দেয়। নিজের চেষ্টায় জীবন কাটানো এবং অপরের ওপর নির্ভরতা কমানো ইসলামী নৈতিকতা নির্দেশ করে।
রাসুল (সা.) আরো বলেন : ‘যে ব্যক্তি কারো কাছে কোনো কিছু না চাওয়ার নিশ্চয়তা দিতে পারবে, আমি তার জন্য জান্নাতের জিম্মাদার হবো।’ (আবু দাউদ, হাদিস : ১৬৪৩)
৫. তিক্ত হলেও সদা সত্য বলবে
রাসুল (সা.) বলেছেন : ‘আমাকে সত্য বলতে বলেছেন, এমনকি যদি তা তিক্ত ও কঠিনও হয়।’ সততা জীবনের মূল ভিত্তি। মিথ্যা যত ছোট হোক না কেন, তা শেষ পর্যন্ত ক্ষতি ডেকে আনে। সত্য বলার সাহস আমাদের নৈতিক চরিত্রকে দৃঢ় করে আর জান্নাতের পথ দেখায়। পবিত্র কোরআনে ইরশাদ হচ্ছে—‘বলো, সত্য তোমার প্রতিপালকের পক্ষ থেকে এসেছে। তাই যে চায় সে বিশ্বাস করুক, আর যে চায় সে অবিশ্বাস করুক।’ (সুরা : কাহফ, আয়াত : ২৯)
৬. আল্লাহর ব্যাপারে কোনো দোষারোপকারীকে ভয় কোরো না
রাসুল (সা.) বলেছেন : ‘আমাকে আল্লাহর পথে লজ্জার ভয় না করতে বলেছেন।’ এ নির্দেশ ধর্মীয় কাজ ও ন্যায়ের পথে লজ্জা বা মানুষের সমালোচনার ভয় না করা শিক্ষা দেয়। এটি আমাদের সাহসী ও ন্যায়পরায়ণ করে তোলে।
৭. বারবার বলো—‘লা হাওলা ওয়ালা কুউয়াতা ইল্লা বিল্লাহ’
রাসুল (সা.) বলেছেন : আমাকে বারবার বলার নির্দেশ দিয়েছেন—‘লা হাওলা ওয়ালা কুওয়াতা ইল্লা বিল্লাহ’। কারণ এটি জান্নাতের ধনভাণ্ডারের একটি ধন। আল্লাহর ওপর আমাদের ভরসা আবশ্যক। তিনি বলেন : ‘যে ব্যক্তি আল্লাহর ওপর ভরসা করে, তার জন্য আল্লাহই যথেষ্ট।’ (সুরা : আত-তালাক, আয়াত : ৩)
এই বাক্যটি আমাদের মনে করায় যে আমরা একমাত্র আল্লাহর ক্ষমতায় ভরসা রাখি। এটি ধৈর্য, শান্তি ও মানসিক শক্তি বৃদ্ধি করে।
এই সাত আদেশ শুধু নৈতিক নির্দেশনা নয়, বরং আমাদের দৈনন্দিন জীবনের জন্য কার্যকর দিশা। এ হাদিসের শিক্ষা আমাদের আত্মিক, সামাজিক ও নৈতিক উন্নতির পথপ্রদর্শক।
লেখক : শিক্ষক, প্যারামাউন্ট স্কুল অ্যান্ড কলেজ, রাজশাহীপারি।
Post a Comment