খাগড়াছড়িতে মারমা কিশোরীকে দলবদ্ধ ধর্ষণের প্রতিবাদে এবং ধর্ষকদের দৃষ্টান্তমূলক শাস্তির দাবিতে ‘জুম্ম ছাত্র জনতার’ ব্যানারে চলছে অনির্দিষ্টকালের সড়ক অবরোধ কর্মসূচি। জেলায় আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতির চরম অবনতি ও জনগণের জান ও মালের ক্ষতি সাধনের আশঙ্কায় গুইমারা উপজেলায় ১৪৪ ধারা অব্যাহত রয়েছে।রোববার (২৮ সেপ্টেম্বর) বেলা ১টায় খাগড়াছড়ির গুইমারা উপজেলার রামেসু বাজারে এ ঘটনা ঘটে। এ সময় আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর ওপর অবরোধকারীদের হামলায় সেনাবাহিনীর সদস্যসহ ২৫ জন আহত হয়েছেন। উত্তেজিত জনতা বেশ কিছু দোকানপাট বাড়িঘর ভাঙচুর ও পুড়িয়ে দেয়। এলাকায় বিরাজ করছে থমথমে পরিস্থিতি।
এ ছাড়া সাজেকে আটকে পড়া প্রায় ২১৪৭ পর্যটক শনিবার রাতেই সেনাবাহিনীর বিশেষ নিরাপত্তায় ঢাকায় পাঠানো হয়েছে।
অপর দিকে উদ্ভূত পরিস্থিতি মোকাবেলায় সবাইকে ঐক্যবদ্ধ হয়ে কাজ করার আহ্বান জানান পার্বত্য চট্টগ্রাম বিষয়ক মন্ত্রনালয়ের উপদেষ্টা সুপ্রদীপ চাকমা।
জানা যায়, রোববার সকাল থেকে খাগড়াছড়ি শহর ও শহরতলীতে সবধরনের যান চলাচল বন্ধ রয়েছে। ছেড়ে যায়নি কোনো দূরপাল্লার বাস। সাধারণ জনগণ বাসা থেকে রাস্তায় বের হতে পারছেন না। এ অবস্থাও খাগড়াছড়ির গুইমারা উপজেলায় ১৪৪ ধারা জারি থাকলেও জরুরি আইন উপেক্ষা করে আজ বেলা ১১টার দিকে গুইমারা উপজেলার খাদ্য গুদামের সামনে অবরোধকারীরা জড়ো হয়ে টায়ার জ্বালিয়ে অস্থিতিশীল পরিস্থিতি সৃষ্টি করে। এ সময় অবরোধকারীদের হামলায় ১১ সেনাবাহিনীর সদস্য, তিন পুলিশ, এক সাংবাদিকসহ ২৫ জন আহত হন। উত্তেজিত জনতা বেশ কিছু দোকানপাট বাড়ি-ঘর ভাঙচুর ও পুড়িয়েএ দিকে সাজেকে আটকে পড়া প্রায় ২১৪৭ জন পর্যটককে রাতে সেনাবাহিনীর বিশেষ নিরাপত্তায় ঢাকার উদ্দেশ্যে নিয়ে যাওয়া হয়।
বর্তমানে খাগড়াছড়িতে থমথমে পরিস্থিতি বিরাজ করছে। শহর ও শহরতলীতে অতিরিক্ত নিরাপত্তার স্বার্থে জেলা পুলিশের পাশাপাশি ৩ প্লাটুন আর্মড পুলিশ ও ৭ প্লাটুন বিজিবি অতিরিক্ত দায়িত্ব পালন করছে।
এর আগে শনিবার (২৭ সেপ্টেম্বর) দুপুরে সদর উপজেলা পরিষদ এলাকা থেকে পাহাড়ি ও বাঙ্গালীদের মধ্যে দুপক্ষের সংঘর্ষ শুরু হলে সাধারণ জনগণ ভীত হয়ে পড়েন। এ সময় আটজন আহত হয় । এরমধ্যে আশঙ্কাজনক অবস্থায় নিকন চাকমা (২৫) নামে এক যুবককে চট্টগ্রামে পাঠানো হয়েছে। এ ছাড়া জেলা সদরের বেশ কিছু সংখ্যক দোকান পাট ভাঙচুর ও লুটপাট করা হয়।
এ বিষয়ে খাগড়াছড়ি জেলা ম্যাজিস্ট্রেট এবিএম ইফতেখারুল ইসলাম খন্দকার জানান, বর্তমানে পরিস্থিতি শান্ত রয়েখাগড়াছড়ি সদর থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) আব্দুল বাতেন মৃধা জানান, তৃতীয় দফা অবরোধের কারণে এখন পর্যন্ত কোথাও কোনো ধরনের অপ্রীতিকর ঘটনা ঘটেনি। জেলা সদরে ১৪৪ ধারা জারি রয়েছে। অপ্রীতিকর ঘটনা এড়াতে পুলিশ সর্তক রয়েছে। এ ছাড়া সবল গুরুত্বপূর্ণ স্থানে পুলিশ মোতায়েন রয়েছে।
এ দিকে আজ সকালে জেলা প্রশাসনের সম্মেলন কক্ষে খাগড়াছড়িতে উদ্ভূত সহিংসতা নিরসনে বিশেষ মতবিনিমিয় সভা অনুষ্ঠিত হয়েছে। এতে উপস্থিত ছিলেন: পার্বত্য চট্টগ্রাম বিষয়ক মন্ত্রণালয়ের উপদেষ্টা সুপ্রদীপ চাকমা।
খাগড়াছড়ি জেলা প্রশাসক এবিএম ইফতেখারুল ইসলামের সভাপতিত্বে সভায় পার্বত্য জেলা পরিষদ চেয়ারম্যান শেফালিকা ত্রিপুরা, সদর জোন কমান্ডার লে ক খাদেমুল ইসলাম, পুলিশ সুপার আরেফিন জুয়েলসহ রাজনৈতিক, সামাজিক ব্যক্তিরা উপস্থিত ছিলেন। সভা থেকে উদ্ভূত পরিস্থিতি মোকাবেলায় সবাইকে ঐক্যবদ্ধ হয়ে কাজ করার আহ্বান জানানো হয়।
উল্লেখ্য, গত ২৩ সেপ্টেম্বর সন্ধ্যায় প্রাইভেট পড়া শেষে ফেরার পথে অষ্টম শ্রেণির এক মারমা কিশোরী সংঘবদ্ধ ধর্ষণের শিকার হয়। এ ঘটনায় ভুক্তভোগীর বাবা অজ্ঞাত তিনজনকে আসামি করে খাগড়াছড়ি সদর থানায় মামলা দায়ের করেন। এ ঘটনার পর দিন ২৪ সেপ্টেম্বর সকালে সেনাবাহিনীর সহায়তায় সন্দেহভাজন যুবক শয়ন শীলকে আটক করে পুলিশ। বর্তমানে তাকে রিমান্ডে জিজ্ঞাসাবাদ চলছে।ছে। দেন।
Post a Comment