মানুষ জীবনে প্রতিদিন অসংখ্য কাজ করে; তাতে কখনো সচেতনভাবে আবার কখনো অজান্তেই ছোটখাটো ভুল বা পাপ ঘটে। এসব ভুল মানুষকে ধীরে ধীরে আল্লাহর নৈকট্য থেকে দূরে ঠেলে দিতে পারে। তবে মহান আল্লাহ বান্দাদের জন্য এমন একটি দিকনির্দেশ দিয়েছেন, যা দৈনন্দিন জীবনের ছোটখাটো গুনাহ মুছে দিতে সক্ষম—এটি হলো অজু।
অজু শুধু নামাজের পূর্বশর্ত নয়; এটি দেহ ও আত্মার পরিচ্ছন্নতার এক বিশেষ মাধ্যরাসুলুল্লাহ (সা.) আমাদের শিক্ষা দিয়েছেন, যে মুসলিম উত্তম পদ্ধতিতে অজু সম্পন্ন করে, তার চোখ, হাত ও পা দিয়ে করা ছোটখাটো গুনাহ পানির সঙ্গে ঝরে পড়ে-
عَنْ أَبِي هُرَيْرَةَ، أَنَّ رَسُولَ اللَّهِ صلى الله عليه وسلم قَالَ " إِذَا تَوَضَّأَ الْعَبْدُ الْمُسْلِمُ - أَوِ الْمُؤْمِنُ - فَغَسَلَ وَجْهَهُ خَرَجَ مِنْ وَجْهِهِ كُلُّ خَطِيئَةٍ نَظَرَ إِلَيْهَا بِعَيْنَيْهِ مَعَ الْمَاءِ - أَوْ مَعَ آخِرِ قَطْرِ الْمَاءِ - فَإِذَا غَسَلَ يَدَيْهِ خَرَجَ مِنْ يَدَيْهِ كُلُّ خَطِيئَةٍ كَانَ بَطَشَتْهَا يَدَاهُ مَعَ الْمَاءِ - أَوْ مَعَ آخِرِ قَطْرِ الْمَاءِ - فَإِذَا غَسَلَ رِجْلَيْهِ خَرَجَتْ كُلُّ خَطِيئَةٍ مَشَتْهَا رِجْلاَهُ مَعَ الْمَاءِ - أَوْ مَعَ آخِرِ قَطْرِ الْمَاءِ - حَتَّى يَخْرُجَ نَقِيًّا مِنَ الذُّنُوبِ " .
আবু হুরাইরাহ (রা.) থেকে বর্ণিত। রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন, কোনো মুসলিম কিংবা মুমিন বান্দা (রাবির সন্দেহ) অজুর সময় যখন মুখমণ্ডল ধুয়ে ফেলে তখন তার চোখ দিয়ে অর্জিত গুনাহ পানির সাথে অথবা (তিনি বলেছেন) পানির শেষ বিন্দুর সঙ্গে বের হয়ে যায় এবং যখন সে দুটি হাত ধৌত করে, তখন তার দুহাতের স্পর্শের মাধ্যমে সব গুনাহ পানির অথবা পানির শেষ বিন্দুর সঙ্গে ঝরে যায়। অতঃপর যখন সে পা দুটি ধৌত করে, তখন তার দুই পা দিয়ে হাঁটার মাধ্যমে অর্জিত সব গুনাহ পানির সঙ্গে অথবা পানির শেষ বিন্দুর সঙ্গে ঝরে যায়, এমনকি সে যাবতীয় গুনাহ থেকে মুক্ত ও পরিষ্কার-পরিচ্ছন্ন হয়ে যায়। (সহিস মুসলিম, হাদিস : ২৪৪)
সংক্ষিপ্ত ব্যাখ্যা
১. অজুর আধ্যাত্মিক প্রভাব
সাধারণত আমরা অজুকে শুধু নামাজের পূর্বশর্ত হিসেকিন্তু এই হাদিস প্রমাণ করে, অজু শুধুই শারীরিক পরিচ্ছন্নতা নয়; বরং এটি আত্মিক পরিচ্ছন্নতারও মাধ্যম। অজুর পানি যখন অঙ্গ থেকে ঝরে পড়ে, তখন শুধু ধুলো-ময়লা নয়, বরং অঙ্গ দিয়ে সংঘটিত গুনাহগুলোও আল্লাহ মুছে দেন।
২. চোখের গুনাহ
মানুষের সবচেয়ে বড় ফিতনা হলো দৃষ্টি। হারাম দৃশ্যের দিকে তাকানো, কারো প্রতি ঘৃণা বা হিংসার চোখে দেখা—এসব চোখের গুনাহ।
অজুর সময় মুখমণ্ডল ধোয়া হলে চোখ দিয়ে হওয়া এসব গুনাহ ঝরে যায়।
৩. হাতের গুনাহ
হাত দিয়ে হারাম ধরা, অন্যায় লেখা, কারো ক্ষতি করা—এসব হাতের গুনাহ। হাত ধোয়ার সঙ্গে সঙ্গে এগুলো আল্লাহ ক্ষমা করে দেন।
৪. পায়ের গুনাহ
মানুষ যে পথে চলে, তা হয়তো হারামের দিকে নিয়ে যায়। ভুল জায়গায় যাওয়া, অন্যায়ের সহযোগিতা করা ইত্যাদি পা ধোয়ার সময় সেসব গুনাহ ঝরে যায়।
৫. অজু গুনাহ থেকে পরিচ্ছন্ন হওয়ার উপায়
এখানে বোঝানো হয়েছে, আল্লাহ তাঁর রহমতে অজুকে বান্দার গুনাহ মাফের মাধ্যম বানিয়েছেন। তবে এটি ছোটখাটো (সগিরা) গুনাহের জন্য। বড় গুনাহ (কবিরা) থেকে মুক্তি পেতে আলাদা তাওবা করা আবশ্যক।
৬. ঈমানের সৌন্দর্য
এই হাদিস ইঙ্গিত করছে যে, ঈমান শুধু অন্তরের বিশ্বাস নয়; বরং আমল (কাজ) দিয়েও তা পরিশুদ্ধ হয়। অজু শুধু শরীর নয়, অন্তরকেও পবিত্র করে।
আলেমদের ব্যাখ্যা
ইমাম নববী (রহ.) বলেন, ‘এ হাদিসের অর্থ হলো, অজুর মাধ্যমে বান্দা ছোটখাটো গুনাহ থেকে মুক্ত হয়, তবে কবিরা গুনাহের জন্য অবশ্যই আন্তরিক তাওবা দরকার।’
কুরতুবী (রহ.) বলেন : ‘অজু হচ্ছে নামাজের দরজা। যেমন নামাজ কেয়ামতের দিনে নূর হবে, তেমনি অজু কেয়ামতের দিনে বান্দার জন্য নূরের উজ্জ্বলতা বয়ে আনবে।’
শিক্ষা ও উপদেশ
* প্রতিটি অজুকে শুধুই নামাজের শর্ত ভেবে না নিয়ে, এটিকে আল্লাহর রহমত লাভ ও গুনাহ মাফের সুযোগ মনে করতে হবে।
* মুসলমানের উচিত অল্প সময় পর পর অজু নবায়ন করা—যেমন রাসুল (সা.) প্রায়ই অজু করে থাকতেন।
* নামাজের বাইরে অন্যান্য সময়ও অজু করলে এটি নূর বাড়ায়, গুনাহ কমায় এবং ফেরেশতারা সঙ্গ দেয়।
* অজুর সময় খুশু-খুজু ও দোয়া পড়া (যেমন : ‘আশহাদু আল্লা ইলাহা ইল্লাল্লাহ...’) আমাদের আমলকে আরো পরিপূর্ণ করে।পায়ের গুনাহ।বে দেখি।ম।
Post a Comment