বর্তমান সময়ে তরুণ প্রজন্মকে বাইরে থেকে দেখলে ফিট ও সুস্থ মনে হলেও ভেতরে ভেতরে অনেকেই অজান্তেই হৃদরোগের ঝুঁকিতে পড়ে যাচ্ছেন। একসময় ধারণা ছিল হৃদরোগ বা হার্ট অ্যাটাক শুধু বয়সে প্রবীণদেরই সমস্যা। কিন্তু সাম্প্রতিক বছরগুলোতে ২০–৩০ বছরের তরুণদের মধ্যেও হার্ট অ্যাটাক ও আকস্মিক কার্ডিয়াক অ্যারেস্টের ঘটনা বেড়ে চলেছে।হায়দরাবাদের কেয়ার হসপিটালসের সিনিয়র ইন্টারভেনশনাল কার্ডিয়োলজিস্ট ডা. এম. শ্রীনিবাস রাও সতর্ক করে বলেন, তরুণ বয়সেই অনেকেই গুরুতর হৃদরোগ নিয়ে হাসপাতালে ভর্তি হচ্ছেন। দীর্ঘ কর্মঘণ্টা, মানসিক চাপ, অনিয়মিত ঘুম, ফাস্টফুড, অজানা উচ্চ রক্তচাপ, কোলেস্টেরল, ডায়াবেটিস, পারিবারিক ইতিহাসসহ নানা কারণে হৃদযন্ত্রের ক্ষতি হয়। এছাড়া দূষণ ও ধূমপানের মতো অভ্যাসও নীরবে ধমনিতে ক্ষতি ডেকে আনে। তিনি বলেন, কোনো তরুণ বাইরে থেকে সুস্থ দেখালেও ভেতরে ভেতরে রক্তনালিতে প্লাক জমা শুরু হয়ে যেতে পারে।” তাই হার্ট ভালো রাখতে এখনই গুরুত্ব দেয়া জরুরি। ডা. রাওয়ের দেওয়া ৫টি সহজ উপায় যা তরুণদের এখন থেকেই মানা উচিত—১. খাবারের প্রতি নজর রাখুন
পালং শাক, ব্রকলি, গাজর, বেরি, কমলালেবু, ওটস, ব্রাউন রাইসের মতো শস্য এবং বাদাম, বীজ, অলিভ অয়েল বা অ্যাভোকাডোর মতো স্বাস্থ্যকর চর্বি নিয়মিত খাদ্যতালিকায় রাখুন। ফাস্টফুড, কোমল পানীয়, প্রসেসড স্ন্যাকস ও অতিরিক্ত লবণ খাওয়া বন্ধ করুন২. সপ্তাহে অন্তত ১৫০ মিনিট ব্যায়াম করুন
প্রতিদিন শরীরকে সচল রাখুন। সাইক্লিং, সাঁতার অথবা সপ্তাহে দুদিন শক্তি বাড়ানোর ব্যায়াম করুন। অফিসে সিঁড়ি ব্যবহার করা, হাঁটা বা অল্প সময়ের দৌড়ও কাজে দেয়।
৩. নিয়মিত স্বাস্থ্য পরীক্ষা করুন
রক্তচাপ, কোলেস্টেরল, রক্তে শর্করা, ওজন ও কোমরের মাপ নিয়মিত পর্যবেক্ষণ করুন। অনেক সময় কোনো উপসর্গ না থাকলেও এই সংখ্যাগুলোই ঝুঁকি সম্পর্কে আগে থেকে সতর্ক করে ৪. মানসিক চাপ নিয়ন্ত্রণ করুন
চাপ বাড়লে রক্তচাপ ও ধমনিতে প্রদাহ বৃদ্ধি পায়। প্রতিদিন কয়েক মিনিট যোগব্যায়াম, শ্বাস-প্রশ্বাসের অনুশীলন বা মোবাইল ছাড়া হাঁটা মানসিক স্বাস্থ্যের জন্য জরুরি।
৫. ধূমপান ও মদ্যপান থেকে দূরে থাকুন
ধূমপান বা ভেপিং ধমনির ক্ষতি দ্রুত বাড়ায় এবং রক্ত জমাট বাঁধার ঝুঁকি তৈরি করে। অতিরিক্ত মদ্যপান হৃদযন্ত্রের ছন্দ বিঘ্নিত করতে পারে। তরুণদের মধ্যে পার্টি বা আড্ডায় অভ্যাস তৈরি হলেও এটি দীর্ঘমেয়াদে মারাত্মক ক্ষতি করে।
ডা. রাওর মতে, তরুণ বয়সকে শুধু উপভোগের সময় ভেবে স্বাস্থ্যকে অবহেলা করা উচিত নয়। হার্ট অ্যাটাক মধ্য বয়স পর্যন্ত অপেক্ষা করে না। তাই এখন থেকেই জীবনযাত্রায় ইতিবাচক পরিবর্তন আনা জরুরি। প্রতিদিনের ছোট ছোট অভ্যাসই দীর্ঘমেয়াদে হৃদযন্ত্রকে সুস্থ রাখতে বড় ভূমিকা রাখে।
Post a Comment