রাতে ঘুমানোর সময় লালা ঝরানো কি মরণ বেধি কোনো রোগ?

 

রাতে ঘুমানোর সময় লালা ঝরানো সাধারণত একটি সাধারণ সমস্যা এবং বেশিরভাগ ক্ষেত্রে এটি কোনো মরণব্যাধি রোগের লক্ষণ নয়। তবে, কিছু কিছু ক্ষেত্রে এটি অন্তর্নিহিত স্বাস্থ্য সমস্যার ইঙ্গিত হতে পারে।

সাধারণ কারণসমূহ:


 * শোয়ার ভঙ্গি: চিত হয়ে না শুয়ে কাত হয়ে বা উপুড় হয়ে ঘুমালে মাধ্যাকর্ষণের টানে মুখ থেকে লালা বেরিয়ে আসতে পারে।


 * নাক বন্ধ থাকা: সর্দি, অ্যালার্জি, সাইনাস সংক্রমণ বা অন্য কোনো কারণে নাক বন্ধ থাকলে মুখ দিয়ে শ্বাস নিতে হয়, যার ফলে লালা ঝরতে পারে।


 * ঘুমের গভীরতা: গভীর ঘুমে মুখের পেশী শিথিল হয়ে যায়, ফলে লালা গিলে ফেলা যায় না এবং তা মুখ থেকে ঝরে পড়ে।


 * ওষুধের পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া: কিছু ওষুধ, যেমন অ্যান্টিসাইকোটিক বা আলঝাইমারের চিকিৎসার ওষুধ, লালা উৎপাদন বাড়িয়ে দিতে পারে।


 * দাঁতের সমস্যা: দাঁতের ফাঁকে খাদ্যকণা জমে বা মাড়ির প্রদাহের কারণে লালা উৎপাদন বাড়তে পারে।


 * বয়স: ছোট বাচ্চাদের ক্ষেত্রে লালা ঝরানো স্বাভাবিক, কারণ তাদের মুখের পেশী পুরোপুরি বিকশিত হয় না।


গুরুত্বপূর্ণ বা উদ্বেগের কারণ হতে পারে এমন কিছু অবস্থা:


যদি লালা ঝরানো অতিরিক্ত এবং দীর্ঘস্থায়ী হয়, তবে তা কিছু স্বাস্থ্য সমস্যার লক্ষণ হতে পারে, যেমন:


 * গ্যাস্ট্রোইনটেস্টাইনাল রিফ্লাক্স ডিসঅর্ডার (GERD): পাকস্থলীর অ্যাসিড খাদ্যনালীকে জ্বালাতন করলে লালা উৎপাদন বাড়তে পারে এবং গিলতে অসুবিধা হতে পারে।


 * স্লিপ অ্যাপনিয়া: এই রোগে ঘুমের সময় শ্বাস-প্রশ্বাস কিছু সময়ের জন্য বন্ধ হয়ে যায়, যার ফলে মুখ দিয়ে শ্বাস নিতে হয় এবং লালা ঝরতে পারে। স্লিপ অ্যাপনিয়া একটি গুরুতর অবস্থা হতে পারে।


 * স্নায়বিক রোগ: স্ট্রোক, পারকিনসন রোগ, সেরিব্রাল পলসি বা মাল্টিপল স্ক্লেরোসিসের (MS) মতো স্নায়বিক রোগে মুখের পেশী নিয়ন্ত্রণ ব্যাহত হতে পারে, যার ফলে লালা ঝরতে পারে।


 * কৃমি: কিছু ক্ষেত্রে কৃমির সমস্যা থেকেও মুখ দিয়ে লালা ঝরতে পারে।


কখন চিকিৎসকের পরামর্শ নেওয়া উচিত?


যদি আপনার মুখ থেকে অতিরিক্ত লালা ঝরানো হয় এবং এর সাথে নিচের কোনো লক্ষণ দেখা যায়:


 * ঘুমের ব্যাঘাত, নাক ডাকা বা শ্বাস-প্রশ্বাসের অস্বাভাবিকতা।


 * গিলতে অসুবিধা।


 * কথা বলতে বা খেতে সমস্যা।


 * অন্যান্য স্নায়বিক লক্ষণ (যেমন দুর্বলতা, ভারসাম্যহীনতা)।


 * হঠাৎ করে শুরু হওয়া অতিরিক্ত লালা ঝরানো।


এই লক্ষণগুলো দেখা দিলে একজন চিকিৎসকের পরামর্শ নেওয়া জরুরি। চিকিৎসক আপনার অবস্থা নির্ণয় করে প্রয়োজনীয় চিকিৎসা দিতে পারবেন।


সাধারণ প্রতিকার:


 * চিত হয়ে ঘুমানোর অভ্যাস করুন।


 * উঁচু বালিশ ব্যবহার করুন।


 * নাক বন্ধ থাকলে তার চিকিৎসা করুন (যেমন অ্যালার্জির ওষুধ বা নেজাল স্প্রে)।


 * ওজন নিয়ন্ত্রণ করুন।


 * নিয়মিত দাঁত ব্রাশ করুন এবং মুখের স্বাস্থ্যবিধি বজায় রাখুন।


মনে রাখবেন, বেশিরভাগ ক্ষেত্রে লালা ঝরানো কোনো গুরুতর সমস্যা নয়, তবে যদি আপনার উদ্বেগ থাকে বা অন্য কোনো লক্ষণ দেখা যায়, তবে চিকিৎসকের পরামর্শ নেওয়া উচিত।

Countdown Timer

Post a Comment

Previous Post Next Post