তাবিজ ব্যবহার: ইসলামি বিধান ও সতর্কতা

 


তাবিজ নিয়ে মুসলিম সমাজে বিভিন্ন মত ও বিভ্রান্তি রয়েছে। অনেকেই মনে করেন, যেকোনো তাবিজ ব্যবহারই শিরক বা নাজায়েজ। কিন্তু বিষয়টি সতর্কতার সঙ্গে বুঝা জরুরি।কোন তাবিজ নাজায়েজ?

রাসুলুল্লাহ (স.) ইরশাদ করেন, ‘মন্ত্র, তাবিজ এবং মহব্বতের তাবিজ শিরকের অন্তর্ভুক্ত।’ (আবু দাউদ: ৩৩৮৫)  

এখানে ‘তামিমা’ বলা হয়েছে—যা জাহেলি যুগে শামুক-ঝিনুকের কড়ি, পাথর বা অন্যান্য বস্তুতে কুসংস্কারপূর্ণ বিশ্বাস নিয়ে ব্যবহার করা হতো। এগুলোকে স্বয়ংক্রিয়ভাবে ক্ষমতাশালী মনে করা হতো, যা সরাসরি শিরকোন তাবিজ জায়েজ?

ইসলামি স্কলারদের মতে, শর্তসাপেক্ষে জায়েজ


তাবিজে কোরআনের আয়াত বা সহিহ হাদিসে বর্ণিত দোয়া থাকতে হবে।

এটিকে প্রভাব বিস্তারকারী না ভেবে, আল্লাহর কাছে মাধ্যম হিসেবে বিশ্বাস করতে হবে।

তাবিজের প্রতি নয়, বরং আল্লাহর রহমত ও শক্তির উপর ভরসা রাখতেসাহাবায়ে কেরামও কোরআনের আয়াত লিখে পানি পান করতেন বা ব্যবহার করতেন, যা থেকে এর বৈধতার প্রমাণ মেলে। মূলত, আল্লাহকে শিফা দানকারী মনে করে ওষুধ সেবন যেমন শিরক নয়, তেমনি আল্লাহকে শিফা দানকারী মনে করে তাবিজ ব্যবহারও শিরক নয় বরং জায়েজ।বিখ্যাত ফতোয়ার কিতাবে এসেছে, ‘তাবিজ ব্যবহারে কোন সমস্যা নেই।’ (ফতোয়া হিন্দিয়া খ:৫ পৃ:৩৫৯) ইবনে তাইমিয়া রহ. বলেন, ‘বিপদগ্রস্ত বা অসুস্থ লোকদের জন্য ক্বারি দ্বারা আল্লাহর কিতাব, আল্লাহর জিকর লিখে দেয়া এবং ধুয়ে পান করা জায়েজ। তারপর এ আলোচনার শেষদিকে তিনি তাবিজাত বৈধ হওয়ার পক্ষে হযরত ইবনে আব্বাস (রা.) এর একটি আছার পেশ করেন। ইবনে আব্বাস (রা.) কাগজের টুকরায় তাবিজ লিখে দিতেন, তা সন্তানসম্ভবা নারীদের বাহুতে বেঁধে দেয়া হত। (ফতোয়া ইবনে তাইমিয়া: ১৯/৬৪)


গুরুত্বপূর্ণ সতর্কতা

১. চিকিৎসা: তাবিজ প্রথম সমাধান নয়; প্রথম সমাধান চিকিৎসা। রাসুল (স.) বলেছেন, ‘আল্লাহ রোগ দিয়েছেন, প্রতিষেধকও দিয়েছেন।’ (মুয়াত্তা মালেক: ১৭৫৭)  

২. শিরকি বিশ্বাস এড়ানো: তাবিজকে ‘স্বয়ংক্রিয় শক্তিধর’ মনে করলে তা শিরক হয়ে যায়।  

৩. অনুমোদিত তাবিজ: শুধু কোরআন-সুন্নাহভিত্তিক দোয়া/আয়াত ব্যবহার করা যাবে। অজানা অক্ষর, রহস্যময় চিত্র বা কুফরি কথা ব্যবহার নাজায়েজ।  

৪. বাড়াবাড়ি পরিহার: অনেকেই তাবিজের প্রতি অতি নির্ভরশীল হয়ে পড়েন, যা ঠিক নয়। দোয়া ও চিকিৎসাই প্রধানউত্তম পথ

তাববিজের চেয়ে ‘সরাসরি দোয়া ও ইবাদত’ করাই বেশি নিরাপদ ও ফজিলতপূর্ণ। এতে শিরকের কোনো সম্ভাবনা থাকে না। মনে রাখবেন, তাবিজ শর্তসাপেক্ষে জায়েজ হলেও সচেতনতা অত্যন্ত জরুরি, যাতে শিরকি বিশ্বাস বা কুসংস্কারে পতিত না হওয়া যায়। আল্লাহ তাআলা আমাদেরকে শিরক থেকে বেঁচে থাকার এবং সহিহ-শুদ্ধ আমল করার তাওফিক দান করুন। আমিন। উপায়। হবে।ক।

Countdown Timer

Post a Comment

Previous Post Next Post