স্বামীর মৃত্যুর পর স্ত্রীর জন্য একটি নির্দিষ্ট সময় 'ইদ্দত' পালন করা ইসলামি শরিয়তে ফরজ। এই সময়ে তাঁকে কিছু কাজ থেকে বিরত থাকতে হয়। এ বিষয়ে অনেকের মনেই প্রশ্ন জাগে, ইদ্দত অবস্থায় নাকফুলের মতো সূক্ষ্ম অলংকার পরা যাবে কি না? কোরআন, হাদিস ও ফিকহের নির্ভরযোগ্য গ্রন্থসমূহের আলোকে এ নিয়ে বিস্তারিত জানা যাক।ইদ্দত: শোক, ধৈর্য ও আত্মসংযমের সময়
ইদ্দত হলো একজন স্ত্রীর জন্য তার স্বামীর প্রতি শোক প্রকাশ ও ধৈর্য ধারণের সময়। এই সময়টা হলো চার মাস দশ দিন। পবিত্র কোরআনে এ বিষয়ে ইরশাদ হয়েছে, ‘তোমাদের মধ্যে যারা স্ত্রী রেখে মৃত্যুবরণ করে, তাদের স্ত্রীরা চার মাস দশ দিন (প্রতীক্ষায়) থাকবে...’ (সুরা বাকারা: ২৩৪)। এই সময়টিতে একজন নারীকে সামাজিকতা ও দুনিয়াবি সাজসজ্জা থেকে নিজেকে সরিয়ে রেখে আত্মসংযত ও ধৈর্যশীল থাকতে হয়ইদ্দতে অলংকার পরিধানের বিধান
ইদ্দতের মূল উদ্দেশ্যকে সামনে রেখে আলেমরা একমত যে, এই সময়ে সকল প্রকারের সাজসজ্জা ও অলংকার, যা সৌন্দর্য প্রকাশ করে, তা নিষিদ্ধ। এর মধ্যে নাকফুল, কানের দুল, চুড়ি, আংটি, হার, কঙ্কণ ইত্যাদি সকল অলংকার অন্তর্ভুক্ত। নাকফুল যদিও একটি ছোট ও সূক্ষ্ম অলংকার, তবুও এটি সাজসজ্জারই অংশ। এ বিষয়ে হানাফি মাজহাবের প্রসিদ্ধ ফিকহ গ্রন্থগুলোতে স্পষ্ট উল্লেখ রয়েছে।
কেন এই নিষেধ?
এই নিষেধাজ্ঞার পেছনে বেশ কিছু হিকমত বা প্রজ্ঞা রয়েছে। যেমন- শোক ও সম্মান: এটি স্বামীর প্রতি প্রকৃত শোক ও সম্মানের প্রকাশ।
আধ্যাত্মিকতা: ইদ্দত হলো এমন একটি সময় যখন বাহ্যিক আকর্ষণ থেকে মনোযোগ সরিয়ে আত্মিক ও আধ্যাত্মিক চিন্তাভাবনায় মনোনিবেশ করতেঅন্যের দৃষ্টি আকর্ষণ: এই সময়ে অন্য কারো দৃষ্টি আকর্ষণ করা বা নতুন করে বিবাহের প্রস্তাব নিয়ে চিন্তা করা থেকে বিরত থাকা প্রয়োজন।
ইদ্দত শেষ হওয়ার পর কী করণীয়?
চার মাস দশ দিন ইদ্দত পালন শেষ হয়ে গেলে স্ত্রীর উপর থেকে এসব বিধিনিষেধ উঠে যায়। তখন তিনি পুনরায় স্বাভাবিক জীবনে ফিরে আসতে পারেন এবং প্রয়োজনমতো সকল ধরনের হালাল অলংকার ও পোশাক-পরিচ্ছদ ব্যবহার করতে পারেন।
মোটকথা, স্বামীর মৃত্যুর পর ইদ্দত পালনরত নারীর জন্য নাকফুলসহ যেকোনো ধরনের অলংকার খুলে রাখা বাধ্যতামূলক (ওয়াজিব)। এটি ইসলামি শরিয়তের একটি স্পষ্ট বিধান, যা একজন মুসলিম নারীর জন্য তার স্বামীর প্রতি সম্মান এবং আল্লাহর নির্দেশের প্রতি আনুগত্যের পরিচয় বহন করে।
উল্লেখ্য, হাদিসের আলোকে বিধবা নারীর জন্য চারটি নিষিদ্ধ বিষয় হলো- ১. সুগন্ধি ব্যবহার ২. শারীরিক সাজসজ্জা ৩. পোশাক পরিচ্ছদে সাজসজ্জা এবং ৪. অলংকার আল-বাহরুর রায়েক: ৩/১৫০; ফাতহুল কাদির: ৪/১৬১; ফতোয়া খানিয়া: ১/৫৫৪; তাতারখানিয়া: ৪/৭২)পরিধান হয়।।
Post a Comment