সিদরাতুল মুনতাহা: আরশের নিকটতম রহস্যময় গন্তব্য

 


মানবজাতির ইতিহাসে সবচেয়ে রহস্যময়, আধ্যাত্মিক ও অলৌকিক ভ্রমণ হলো ইসরা ও মিরাজ। এই মিরাজের শ্রেষ্ঠতম মুহূর্তগুলোর একটি হলো সিদরাতুল মুনতাহা-তে পৌঁছানো। এটি সেই স্থান, যেখানে ফেরেশতাদের সীমা শেষ, সময় থেমে যায়, আরশুল্লাহর নিকটবর্তী সান্নিধ্য শুরু হয়। এমন এক মর্যাদাপূর্ণ স্থান আল্লাহ তাআলা তাঁর প্রিয়তম রসুল সল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম-কে দেখিয়েছেন, এর সৌন্দর্য, মহিমা ও রহস্য।সিদরাতুল মুনতাহা কী?


 

কুরআনে সিদরাতুল মুনতাহা সিদরাতুল মুনতাহা শব্দটি দুইটি আরবি শব্দের সমন্বয়। سِدْرَةٌ (সিদরাহ) বেরি গাছ المُنْتَهَىٰ (মুনতাহা) চূড়ান্ত সীমা চূড়ান্ত সিদরাহ বৃক্ষ, যেখানে সমস্ত সৃষ্ট জীবের জ্ঞান, আমল, তাকদির এসে শেষ হয়। ইবনু আব্বাস রা, বলেন, এটি এমন এক সীমা, যেখানে ফেরেশতারা পৌঁছে তাদের দায়িত্ব শেষ করে। এর ওপরে আর কেউই অতিক্রম করতে পারে না।

(তাফসিরু ইবনু কাসির, সুরা নাজম:১৪) মফাসসিরদের মতে, সিদরাতুল মুনতাহা সপ্তম আসমানের ওপরে, আরশুল্লাহর নিকটে অবস্থিত।

 

আল্লাহ তাআলা বলেন,

 

وَلَقَدۡ رَءَاهُ نَزۡلَةً أُخۡرَىٰ عِندَ سِدۡرَةِ ٱلۡمُنتَهَى عِندَهَا جَنَّةُ ٱلۡمَأۡوَىٰ إِذۡ يَغۡشَى ٱلسِّدۡرَةَ مَا يَغۡشَىٰ নিশ্চয়ই রসুলকে আরো একবার দেখেছেন; সিদরাতুল মুনতাহার কাছে, যার নিকটে রয়েছে জান্নাতুল মাওয়া। যখন সিদরাতুল মুনতাহা আচ্ছাদিত হয়েছিল যা কিছুতে আচ্ছাদিত হওয়ার। সুরা নাজম:১৩-১৬)

 


রসুল সল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম মিরাজে সিদরাতুল মুনতাহার নিকট পৌঁছান।এর কাছেই জান্নাতুল মাওয়া অবস্থিত। এখানে এক অতুলনীয় রহস্যময় পর্দা নেমে আসে, যা কেবল নবি সল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম-ই প্রত্যক্ষ করেন।

 

সিদরাতুল মুনতাহায় পৌঁছানো

 

আনাস ইবনু মালিক রা. থেকে বর্ণিত; فَانْطَلَقَ بِي جِبْرِيلُ حَتَّى أَتَى بِي سِدْرَةَ الْمُنْتَهَى জিবরাইল আমাকে নিয়ে সিদরাতুল মুনতাহার কাছে পৌঁছালেন। এর কাছেই জান্নাতুল মাওয়া অবস্থিত (সহিহ বুখারি: ৩৪৯,সহিহ মুসলিম: ১৬৪)


 


عِندَهَا جَنَّةُ ٱلْمَأْوَىٰ যার নিকটে রয়েছে জান্নাতুল মাওয়া। (সুরা নাজম:১৫) এখানে এক অতুলনীয় রহস্যময় পর্দা নেমে আসে, যা কেবল নবি সল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম প্রত্যক্ষ করেন।

 

আনাস ইবনু মালিক রা. বর্ণনা করেন,

 

وَإِذَا وَرَقُهَا مِثْلُ آذَانِ الْفِيلَةِ، فَغَشِيَهَا مِنْ أَمْرِ اللهِ مَا غَشِيَهَا এর পাতা হাতির কানের মতো বিশাল। তারপর আল্লাহর হুকুমে এমন এক আচ্ছাদন নেমে এলো, যা আমি বর্ণনা করতে অক্ষম। (সহিহ বুখারি: ৩৪৯ | সহিহ মুসলিম: ১৬৮) সিদরাতুল মুনতাহা হলো সপ্তম আসমানের চূড়ান্ত সীমায়, যেখানে ফেরেশতারা পৌঁছায় কিন্তু তার ওপরে আর কেউ যেতে পারে না। এর নিকটে জান্নাতুল মাওয়া অবস্থিত, যা মিরাজে নবি সল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম প্রত্যক্ষ করেন।


 


মুফাসসিরিনদের ব্যাখ্যা

 

ইমাম নববি রহ. সিদরাতুল মুনতাহা সপ্তম আসমানের এক বিশাল বৃক্ষ। এখানে সব সৃষ্টির জ্ঞান এসে শেষ হয়। ফেরেশতারা এখানে পর্যন্ত আসেন, কিন্তু এর ওপরে আর কেউ অতিক্রম করতে পারে না। (শরহু সহিহ মুসলিম:২/২০৬)

 

ইবনু কাসির রহ. এখানেই রসুল সল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম-এর ওপর পাঁচ ওয়াক্ত নামাজ ফরজ করা হয়। এখান থেকেই নবি সল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম-এর সামনে জান্নাতুল মাওয়ার দৃশ্য উন্মুক্ত হয়। ইবনু আব্বাস রা. এটি সেই সীমা যেখানে ফেরেশতাদের দায়িত্ব আধ্যাত্মিক তাৎপর্য

 

এখানে আল্লাহর কুদরতের অপরিসীম মহিমা প্রতিফলিত। ফেরেশতাদের জ্ঞান ও সীমারেখা এখানেই শেষ। এখান থেকেই মানবজাতির জন্য নামাজের উপহার এসেছে। এটি এমন রহস্যময় স্থান, যেখানে আল্লাহর সান্নিধ্যের অনুভূতি সবচেয়ে প্রবল।

 

সিদরাতুল মুনতাহা কেবল একটি বৃক্ষ নয়

 

এটি মানব ইতিহাসের আধ্যাত্মিক সীমানা। রসুলুল্লাহ সল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম-কে আল্লাহ তাআলা এমন এক স্থানে পৌঁছানোর সুযোগ দিয়েছেন, যেখানে ফেরেশতাদেরও প্রবেশাধিকার নেই। কুরআন, এবং মুফাসসিরীনদের ব্যাখ্যা থেকে স্পষ্ট হয়, সিদরাতুল মুনতাহা হলো আরশের নিকটতম রহস্যময় গন্তব্য, যেখানে নবি সল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম-কে আল্লাহ তাআলা এমন মহিমা দেখিয়েছেন যা অন্য কোনো সৃষ্টিকে দেখানো হয়নি।শেষ হয়,এবং তারা আর এগোয় না।

Countdown Timer

Post a Comment

Previous Post Next Post