পরকীয়া নিয়ে সমাজে প্রচলিত ধারণা হলো, এটি অনেক সময় ভালোবাসারই একটি রূপ। কিন্তু মনোবিজ্ঞান এবং সম্পর্ক বিষয়ক বিশেষজ্ঞরা এ বিষয়ে ভিন্ন মত পোষণ করেন। তাদের মতে, পরকীয়াকে ভালোবাসা মনে হলেও এর মূল কারণগুলো প্রায়শই ভালোবাসা থেকে ভিন্ন, এবং এটি আবেগ ও আসক্তির এক জটিল মিশ্রণ।ভালোবাসা বনাম পরকীয়া: মূল পার্থক্য
বিশেষজ্ঞরা বলছেন, সত্যিকারের ভালোবাসা এবং পরকীয়ার মধ্যে বেশ কিছু মৌলিক পার্থক্য রয়েছে. ভালোবাসার ভিত্তি সম্মান, পরকীয়ার ভিত্তি গোপনীয়তা: সত্যিকারের ভালোবাসায় পারস্পরিক সম্মান, বিশ্বাস এবং স্বচ্ছতা থাকে। অন্যদিকে, পরকীয়া সম্পর্ক গড়ে ওঠে গোপনীয়তা, মিথ্যা এবং প্রতারণার ওপর। এই ধরনের সম্পর্কে সততার অভাব থাকে, যা এর ভিত্তিকে দুর্বল করে দেয়।
২. ভালোবাসা দেয় নিরাপত্তা, পরকীয়া দেয় উত্তেজনা: নতুন সম্পর্কের শুরুতে যে তীব্র আকর্ষণ বা উত্তেজনা থাকে, পরকীয়ার ক্ষেত্রে তা মূলত সেই অনুভূতির ওপর নির্ভরশীল। এটি একটি নিষিদ্ধ সম্পর্কের উত্তেজনা, যা সাময়িক এবং ক্ষণস্থায়ী। বিশেষজ্ঞরা বলেন, এই উত্তেজনাকে অনেকে ভালোবাসা বলে ভুল করেন, কিন্তু সময়ের সঙ্গে সঙ্গে এই আসক্তি কেটে যায়।
৩. দায়িত্ব এবং প্রতিশ্রুতি: ভালোবাসায় থাকে দায়িত্ববোধ এবং প্রতিশ্রুতি। একজন ব্যক্তি তার সঙ্গীর প্রতি দায়বদ্ধ থাকে। পরকীয়ায় সেই দায়িত্ববোধ থাকে না। এখানে সাধারণত নিজের চাহিদা পূরণের ওপরই বেশি মনোযোগ দেওয়া পরকীয়ার মূল কারণগুলো কী?
বিশেষজ্ঞরা বলছেন, পরকীয়ার পেছনে ভালোবাসার অভাব নয়, বরং অন্য কিছু কারণ কাজ করেমানসিক বা শারীরিক চাহিদা: বর্তমান সম্পর্কের মধ্যে যদি মানসিক বা শারীরিক চাহিদা পূরণ না হয়, তবে ব্যক্তি সেই শূন্যতা পূরণের জন্য অন্য সম্পর্কে জড়াতে পারে।
একঘেয়েমি: দীর্ঘদিনের সম্পর্কে একঘেয়েমি চলে এলে অনেকে নতুনত্ব খুঁজতে শুরু করেন।
আত্মবিশ্বাসের অভাব: নিজের জীবনে বা সম্পর্কে আত্মবিশ্বাসের অভাব থাকলে অনেকে অন্য কারও কাছ থেকে মনোযোগ পেতে চান, যা তাদের সাময়িক তৃপ্তি দেযোগাযোগের অভাব: যদি স্বামী-স্ত্রীর মধ্যে সঠিকভাবে যোগাযোগ না হয় বা মনের কথা বলার সুযোগ না থাকে, তবে সম্পর্ক দুর্বল হয়ে পড়ে।
বিশেষজ্ঞদের চূড়ান্ত পর্যবেক্ষণ
মনোবিজ্ঞানীরা বলছেন, পরকীয়া হলো একটি লক্ষণ, কোনো রোগ নয়। এটি বর্তমান সম্পর্কের গভীর সমস্যার একটি বহিঃপ্রকাশ। পরকীয়াকে ভালোবাসা না বলে বরং একটি আসক্তি, সাময়িক উত্তেজনা বা বর্তমান সম্পর্কের দুর্বলতার ফল হিসেবে দেখা উচিত। সত্যিকারের ভালোবাসা সম্পর্ককে আরও উন্নত করে, কিন্তু পরকীয়া বিদ্যমান সম্পর্ককে ধ্বংস করে দেয় এবং সব পক্ষকেই মানসিক যন্ত্রণায় ফেলে।
Post a Comment