অধিকার আদায়ে ইসলাম যে নির্দেশনা দেয়

 


আল্লাহ তাআলা মানুষের অধিকারকে নিজের অধিকারের ওপরে প্রাধান্য দিয়েছেন। বলা হয়েছে, যদি কেউ মানুষের অধিকার আদায় করে, তাহলে সে আল্লাহর অধিকারও আদায় করল।মানুষের ওপর যে সব দায়িত্ব রয়েছে, তার অন্যতম হচ্ছে-মানুষের অধিকার আদায় করা। যদি কোনো মানুষ কারো অধিকার নষ্ট করে, তাহলে তাকে কঠিন আজাবের শিকার হতে হবে। এটা ইসলামের ঘোষণা।


 

মানুষের অধিকারের সংজ্ঞায় বলা হয়েছে, যার মধ্যে মানুষের অধিকার রয়েছে। এ অধিকার বিভিন্নভাবে প্রতিষ্ঠিত হতে পারে। সেটা যেভাবেই হোক, তা অবশ্য অবশ্যই পরিশোধ করতে, না হলে ক্ষমা করিয়ে নিতে হবে।

 

ইসলাম মানুষের অধিকারকে অত্যন্ত গুরুত্ব দিয়েছে। এ প্রসঙ্গে হজরত রসুলুল্লাহ সা. বলেন, মানুষ যখন আল্লাহর দরবারে তওবা করে, তখন যদি কারও অধিকার তার দায়িত্বে থাকে যতক্ষণ না সে তাকে রাজি না করাবে ততক্ষণ তার তওবা আল্লাহর দরবারে কবুল হবেআমরা জানি, কোনো বান্দা তওবা করলে আল্লাহ খুশি হন। আল্লাহ তার বান্দার অনুতপ্ত ভাব, লজ্জা এবং নমনীয়তা দেখে তাকে ক্ষমা করে দেন। কিন্তু যে অন্যের অধিকার হরণ করছে, নষ্ট করেছে বা ভোগ করেছে- আল্লাহ তাকে ক্ষমা করেন না। এর জন্য অবশ্য অবশ্যই যার অধিকার নষ্ট করা হয়েছে তার সন্তুষ্টি অর্জন করতে হবে।

 

ইসলাম অধিকার আদায়ে যথেষ্ট গুরুত্ব দিয়েছে। নিজের অধিকার আদায়ে প্রয়োজনে সব ধরনের বৈধ, হালাল পদক্ষেপ নিতে বলা হয়েছে। সমাজে দুর্বল হয়ে কোনো মুসলমান বসবাস করবে, এটা ইসলাম পছন্দ করে না। রসুল সা. বলেন, 

 

দুর্বল মুমিনের চেয়ে সবল মুমিন শ্রেষ্ঠ আর আল্লাহর কাছে বেশি প্রিয়। তবে প্রত্যেকের মধ্যেই কল্যাণ আছে। (মুসলিম ২৬৬৪)

 


তাই দুনিয়ায় এমনভাবে চলা যাবে না যে জালিম ও প্রভাবশালীরা তার সম্পদ নিয়ে ছিনিমিনি খেলবে। তার হক বা অধিকার নিয়ে টানাটানি করে।


এ জন্য নিজের অর্জিত সম্পদের সুরক্ষার জন্য সর্বাত্মক চেষ্টা অব্যাহত রাখতে হবে। নিজের অধিকার আগলে রাখতে সব ধরনের চেষ্টা করবে। হজরত আবু হুরায়রা রা. থেকে বর্ণিত, এক ব্যক্তি রসুল সা.-এর কাছে এসে জিজ্ঞেস করল, হে আল্লাহর রসুল! যদি কেউ আমার সম্পদ ছিনিয়ে নিতে উদ্যত হয় তাহলে আমি কী করব? রসুল সা. বলেন, তুমি তাকে তোমার সম্পদ নিতে দেবে না। লোকটি বলল, যদি সে আমার সঙ্গে এ নিয়ে মারামারি করে? রসুল সা. বলেন, তুমি তার সঙ্গে মারামারি করবে। লোকটি বলল, আপনি কী বলেন! যদি সে আমাকে হত্যা করে? রসুল সা. বলেন, তাহলে তুমি শহীদ হিসেবে গলোকটি বলল, আপনি কী মনে করেন, যদি আমি তাকে হত্যা করি? রসুল সা. বলেন, সে জাহান্নামি। (মুসলিম ২৫৭)

 

কষ্ট করে উপার্জন করা সম্পদ বিনষ্ট হতে দেয়া যাবে না। প্রয়োজনে সম্পদের সুরক্ষায় প্রাণপণ লড়াই করে যেতে হবে। হজরত সাঈদ ইবন জাইদ ইবন আমর ইবন নুফাইল রা. থেকে বর্ণিত, রসুলুল্লাহ সা. বলেছেন,

 

কোনো ব্যক্তি নিজের ধন-সম্পদের রক্ষণাবেক্ষণ করতে গিয়ে মারা গেলে সে শহীদ। যে ব্যক্তি এক বিঘত পরিমাণ জমি চুরি করবে কিয়ামত দিবসে তার গলায় সাত তবক জমি ঝুলিয়ে দেওয়া হবে। (তিরমিজি ১৪১৮)

 


পৃথিবীতে বসে এক জন মানুষ অন্যজনের প্রতি যে জুলুম, অত্যাচার, নিপীড়ন করেছে, অধিকার ক্ষুণ্ন করেছে, সম্পদ ও সম্মানের ওপর যে আঘাত করেছে তার বিচার হবে কিয়ামতের দিন। এ বিচারের ধরণ সম্পর্কে হাদিসে এসেছে, হজরত আবু হুরায়রা রাদিয়াল্লাহু আনহু থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, 

 

রসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন, যে ব্যক্তি তার ভাইয়ের প্রতি কোনো অন্যায় করেছে, অথবা তার সম্মানহানি করেছে কিংবা অন্যকোনোভাবে তার ক্ষতি করেছে সে যেন যেদিন কোনো টাকা-পয়সা কাজে আসবে না সে দিন আসার পূর্বে আজই (দুনিয়াতে থাকাবস্থায়) তার প্রতিকার করে নেয়। কিয়ামতের বিচারে অন্যায়কারীর কোনো নেক আমল থাকলে তা থেকে ক্ষতিগ্রস্ত ব্যক্তির পাওনা আদায় করা হবে। আর যদি অন্যায়কারীর নেক আমল না থাকে তাহলে ক্ষতিগ্রস্ত ব্যক্তির পাপগুলো তার উপর চাপিয়ে দেওয়া হবে। (বুখাহাদিসে আরো এসেছে, হজরত আবু হুরায়রা রাদিয়াল্লাহু আনহু থেকে বর্ণিত, রসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন, 

 

তোমরা কি জান দরিদ্র অসহায় ব্যক্তি কে? সাহাবায়ে কেরাম বললেন, আমাদের মধ্যে দরিদ্র অসহায় ব্যক্তিতো সে যার কোনো টাকা পয়সা বা সম্পদ নেই। রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বললেন: আমার উম্মতের মধ্যে সত্যিকার দরিদ্র অসহায় হলো সেই ব্যক্তি যে কিয়ামতের দিন সালাত, সিয়াম ও যাকাতসহ অনেক ভালো কাজ নিয়ে উপস্থিত হবে, অথচ দুনিয়াতে বসে সে কাউকে গালি দিয়েছিল, কারো প্রতি অপবাদ দিয়েছিল, করো সম্পদ আত্মসাৎ করেছিল, কারো রক্তপাত ঘটিয়েছিল, কাউকে মারধর করেছিল, কারো অধিকার ছিনিয়ে নিয়েছিলো, ফলে তার নেক আমলগুলো থেকে নিয়ে তার দ্বারা ক্ষতিগ্রস্ত ব্যক্তিদের পাওনা আদায় করা হবে। এভাবে যখন তার নেক আমলগুলো শেষ হয়ে যাবে ক্ষতিগ্রস্তদের দেওয়ার জন্য আর কিছু থাকবে না তখন তাদের পাপগুলো তাকে দেওয়া হবে ফলে জাহান্নামে নিক্ষিপ্ত হবে। (মুসলিম ২৫৮১)রি ২৪৪৯)ণ্য হবে। না।

Countdown Timer

Post a Comment

Previous Post Next Post