দাঁতে ব্যথা থেকে হতে পারে হৃদরোগ-স্ট্রোক, কিভাবে ঝুঁকি বাড়ে

 


বেশ কয়েকদিন ধরেই দাঁতের যন্ত্রণা বা মাড়ি থেকে রক্ত পড়াকে অনেকেই নিতান্তই মুখের সমস্যা বলে এড়িয়ে যান। দাঁতের চিকিৎসকের কাছে যাওয়া মানেই যেন দাঁত তোলা বা ফিলিং করার মতো গতানুগতিক ধারণা।


কিন্তু চিকিৎসাবিজ্ঞান বলছে, মুখের স্বাস্থ্যের সঙ্গে আমাদের হৃৎপিণ্ডের স্বাস্থ্যের এক গভীর ও সরাসরি যোগসূত্র রয়েছে। মুখের ভেতরের অস্বাস্থ্যকর পরিবেশ, বিশেষ করে মাড়ির রোগ, নীরবে বাড়িয়ে তুলতে পারে হৃদরোগের মারাত্মক ঝুঁকিকিভাবে জড়িত মুখ ও হার্ট


বিশেষজ্ঞদের মতে, এর মূল কারণ হলো ব্যাকটেরিয়া ও প্রদাহ। আমাদের মুখে প্রায় ৭০০ প্রজাতির ব্যাকটেরিয়া বাস করে। যখন আমরা মুখের পরিচ্ছন্নতা নিয়ে উদাসীন থাকি, তখন দাঁতের গোড়ায় ও মাড়িতে খাদ্যকণা জমে ‘প্ল্যাক’ তৈরি হয়। এই প্ল্যাকে থাকা ব্যাকটেরিয়া মাড়িতে সংক্রমণ ঘটায়, যার ফলে ‘জিনজিভাইটিস’ হএই অবস্থায় মাড়ি ফুলে যায় এবং ব্রাশ করার সময় রক্তপাত হয়।জিনজিভাইটিসের চিকিৎসা না করা হলে তা আরো বড় সমস্যা তৈরি করে এবং ‘পেরিওডোনটাইটিস’ নামক মাড়ির রোগে পরিণত হয়। এই অবস্থায় সংক্রমণটি মাড়ির অনেক গভীরে পৌঁছে যায় এবং দাঁতকে ধরে রাখা হাড় ও টিস্যু ক্ষতিগ্রস্ত হতে থাকে।


সমস্যার শুরু এখান থেকেই।


পেরিওডোনটাইটিসের কারণে মাড়িতে যে প্রদাহ ও ব্যাকটেরিয়ার সংক্রমণ হয়, তা শুধু মুখে সীমাবদ্ধ থাকে না। মাড়ির আলগা হয়ে যাওয়া রক্তনালির মাধ্যমে এই ক্ষতিকর ব্যাকটেরিয়া রক্তস্রোতে মিশে যায়। এরপর তা সারা শরীরে ছড়িয়ে পড়ে এবং হৃৎপিণ্ডের ধমনিতে পৌঁছাতে পারে।

কিভাবে ঝুঁকি বাড়ে


অ্যাথেরোস্ক্লেরোসিস : রক্তে মিশে যাওয়া এই ব্যাকটেরিয়া হৃৎপিণ্ডের ধমনীর দেওয়ালে আটকে থাকা কোলেস্টেরলের সঙ্গে যুক্ত হতে পারে। এর ফলে ধমনি আরো সরু ও শক্ত হয়ে যায়, যাকে বলা হয় অ্যাথেরোস্ক্লেএটি রক্ত চলাচলে বাধা সৃষ্টি করে এবং হার্ট অ্যাটাকের ঝুঁকি বহুগুণ বাড়িয়ে দেয়।প্রদাহ বৃদ্ধি : মুখের ব্যাকটেরিয়া রক্তে প্রবেশ করলে শরীর তার বিরুদ্ধে লড়াই করার জন্য প্রদাহ সৃষ্টিকারী প্রোটিন (সি রিয়াকটিভ প্রোটিন) তৈরি করে। এই প্রদাহ কেবল মুখে নয়, পুরো শরীরেই ছড়িয়ে পড়ে এবং রক্তনালিকে ক্ষতিগ্রস্ত করে। এই প্রদাহ রক্ত জমাট বাঁধার প্রবণতাও বাড়ায়। আর এর ফলেই স্ট্রোক বা হার্ট অ্যাটাকের মতো ঘটনা ঘটে।


এন্ডোকার্ডাইটিস : এটি বিরল হলেও মুখের ব্যাকটেরিয়া রক্তের মাধ্যমে বাহিত হয়ে হৃৎপিণ্ডের ভেতরের আস্তরণে সংক্রমণ ঘটাতে পারে। এটি হৃৎপিণ্ডের ভাল্ভকে মারাত্মকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত করতে পারে।


কাদের ঝুঁকি বেশি


যাদের ইতিমধ্যেই হৃদরোগ হয়েছে, ডায়াবেটিস, উচ্চ রক্তচাপ বা ধূমপানের অভ্যাস আছে, তাদের ক্ষেত্রে অপরিচ্ছন্ন মুখের স্বাস্থ্য এই ঝুঁকিকে আরো বাড়িয়ে তোলে। কারণ এই সমস্যাগুলোও শরীরে প্রদাহ বাড়াতে সাহায্য করে।


প্রতিরোধের উপায়


হৃদরোগ বিশেষজ্ঞরা জানাচ্ছেন, হার্টকে সুস্থ রাখার জন্য কেবল তেল-মসলাযুক্ত খাবার ত্যাগ বা ব্যায়াম করাই যথেষ্ট নয়, মুখের স্বাস্থ্যের দিকেও সমান নজর দেওয়ানিয়মিত ব্রাশ ও ফ্লস : দিনে অন্তত দুইবার সঠিক নিয়মে ব্রাশ করা এবং প্রতিদিন ফ্লস ব্যবহার করে দাঁতের ফাঁক পরিষ্কার রাখা আবশ্যক।


নিয়মিত ডেন্টাল চেক-আপ : কোনো সমস্যা না থাকলেও বছরে অন্তত দুইবার দাঁতের চিকিৎসকের কাছে গিয়ে মুখ ও মাড়ির স্বাস্থ্য পরীক্ষা করানো উচিত।


স্বাস্থ্যকর জীবনযাপন : ধূমপান ও তামাকজাত দ্রব্য বর্জন করুন। সুষম ও পুষ্টিকর খাবার গ্রহণ করুন।


সচেতনতা


মাড়ি থেকে রক্তপাত, মুখে দুর্গন্ধ, মাড়ি ফুলে যাওয়া বা দাঁত আলগা হয়ে যাওয়ার মতো লক্ষণ দেখলেই অবহেলা না করে অবিলম্বে চিকিৎসকের পরামর্শ নিন। প্রয়োজন।রোসিস।য়।।

Countdown Timer

Post a Comment

Previous Post Next Post