শ্বাস ধীরে ধীরে আটকে যায় না, চোখের পলকে ঘটে যেতে পারে। মাত্র কয়েক সেকেন্ডের মধ্যে শুরু হয়ে যেতে পারে জীবন-মৃত্যুর লড়াই। ছোট শিশুরা ভুল করে কোনো খেলনা গিলে ফেললে বা প্রাপ্তবয়স্ক মানুষ খুব দ্রুত খেতে গিয়ে খাবার আটকে গলায় ফেলতে পারে। আমাদের শ্বাসনালী খুব সংবেদনশীল। তাই খাবার বা অন্য কোনো বস্তু ভুলবশত শ্বাসনালীতে চলে গেলে তা গলায় আটকে যায়। ফলে ফুসফুসে বাতাস চলাচল বন্ধ হয়ে যায়। এতে মানুষ শ্বাস নিতে পারে না। তাই এমন বিপদের সময় কীভাবে দ্রুত পদক্ষেপ নিতে হয়, তা জানা থাকলে জীবন বাঁচানো সম্ভব।
তবে এর লক্ষণ কিন্তু সব সময় প্রকাশ পায় না। লক্ষণগুলো হয় খুব সূক্ষ্ম। আস্তে কাশির শব্দ, শ্বাস নেওয়ার সময় কেমন যেন একটা ঘড়ঘড়ে বা শিসের মতো শব্দ, অথবা আতঙ্কিত অঙ্গভঙ্গি। তবে বেশিরভাগ ক্ষেত্রে যে লক্ষণটি দেখা যায়, তা হলো গলায় হাত চেপে ধরে তীব্র যন্ত্রণার প্রকাশ। বিভিন্ন পরিস্থিতিতে ভিন্ন ধরনের কৌশল কাজে আসে। তাই এই কৌশলগুলো সম্পর্কে জানা খুবই জরুরিশ্বাস আটকে গেলে কীভাবে সাহায্য করবেন
১. প্রাপ্তবয়স্ক মানুষের শ্বাসনালীতে কিছু আটকে গেলে প্রথমেই দেখবেন, তিনি কাশতে বা কথা বলতে পারছেন কিনা। যদি পারেন, তাঁকে স্বাভাবিকভাবে কাশি দিতে বলুন। কারণ অনেক সময় শরীর নিজে থেকেই আটকে থাকা বস্তুটি বের করে দিতে পারে।
২. যদি কাশি না দিতে পারেন, তবে দেরি না করে দ্রুত জরুরি নম্বরে কল করুন।
৩. শ্বাস আটকে যাওয়ার পর জরুরি সাহায্য আসতে দেরি হলে দ্রুত হাইমলিচ কৌশল ব্যবহার করতে পারেন। প্রথমে আক্রান্ত ব্যক্তির ঠিক পেছনে গিয়ে দাঁড়ান ও আপনার দুটি হাত তার কোমরের চারপাশে জড়িয়ে ধরুন। এক হাত মুষ্টিবদ্ধ করুন ও বুড়ো আঙুল পেটের দিকে রাখুন। মনে রাখবেন, এটি নাভির ঠিক ওপরে কিন্তু পাঁজরের খাঁচার নিচে থাকতে হবে, যাতে চাপটি সঠিক জায়গায় পরে। এবার অন্য হাত দিয়ে মুষ্টিটি শক্ত করে ধরুন এবং ভেতরের দিকে ও ওপরের দিকে দ্রুত এবং শক্তিশালী চাপ দিন। এমনভাবে চাপ দিন যেন কোনো কিছু জোর করে বের করে আনছেন। এই চাপটি পর পর পাঁচবার দিতে হবে। যদি এতেও আটকে থাকা বস্তুটি বেরিয়ে না আসে, তবে আপনার হাতের গোড়ালি ব্যবহার করে আক্রান্ত ব্যক্তির কাঁধের নীচের মাঝখানে পাঁচবার জোরে আঘাত করুন। বস্তুটি বেরিয়ে না আসা পর্যন্ত বা সাহায্য না পৌঁছানো পর্যন্ত পাঁচবার পেটে চাপ ও পাঁচবার পিঠে আঘাতের এই চক্রটি বারবার চালিয়ে যান।
৪. যদি আক্রান্ত ব্যক্তি জ্ঞান হারিয়ে ফেলেন, তাহলে তাকে সাবধানে মাটিতে শুইয়ে অবিলম্বে সিপিআর দেওয়া শুরুবিশেষ পরিস্থিতিতে সাহায্য করার কৌশল
১. এক বছরের বেশি বয়সী শিশুদের জন্য হাইমলিচ কৌশল প্রয়োগের সময় কম বল প্রয়োগ করতে হবে। আর সতর্ক থাকতে হবে বেশি। হাতের পূর্ণ মুষ্টির পরিবর্তে হাতের গোড়ালি ব্যবহার করে পেটে চাপ প্রয়োগ করুন।
২. শিশুর শ্বাস আটকে গেলে তা কিছু গুরুত্বপূর্ণ লক্ষণ দেখে বোঝা সম্ভব। কোনো শিশু যদি কাঁদতে বা কাশি দিতে না পারে, তাহলে তার ত্বক নীলচে হয়ে যাবে। অথবা নিঃশ্বাসের সঙ্গে এক ধরনের তীক্ষ্ণ বা শিসের মতো শব্দ হতে পারে। এমন পরিস্থিতিতে শিশুটিকে আপনার এক হাতে উপুড় করে রাখুন। শিশুর মাথাটিকে হাত দিয়ে শক্তভাবে ধরে রাখুন এবং অন্য হাত দিয়ে তার কাঁধের মাঝখানে আলতো করে চাপ দিন। যদি এতেও আটকে থাকা বস্তুটি বের না হয়, তবে সাবধানে তাকে উল্টে দিন এবং দুই আঙুল ব্যবহার করে তার বুকে চাপ প্রয়োগ করুন। এই চক্রটি বারবার চালিয়ে যান, যতক্ষণ না বস্তুটি বেরিয়ে আসে।
৩. যখন কোনো গর্ভবতী বা স্থূলকায় ব্যক্তি শ্বাসরোধের শিকার হন, তখন তাকে বাঁচানোর জন্য সাধারণ হাইমলিচ কৌশল কাজ করে না। কারণ তাদের পেটের চারপাশে হাত দিয়ে সঠিকভাবে চাপ দেওয়া কঠিন হয়ে যায়। এই পরিস্থিতিতে তাদের পেটের পরিবর্তে বুকে চাপ প্রয়োগ করতে হয়। এই বিশেষ পদ্ধতিটি গর্ভস্থ শিশুর সম্ভাব্য ক্ষতি থেকেও রক্ষা করে। তবে যেকোনো চিকিৎসার চেয়ে প্রতিরোধই সবচেয়ে ভালো। তাই খাবার খাওয়ার সময় সবসময় অল্প অল্প করে এবং ধীরে ধীরে খাওয়া উচিৎ। আর খাবার খাওয়ার সময় অন্য দিকে মনোযোগ না দেওয়াই ভুল করে কোনো জিনিস গিলে ফেললে কী করবেন
সাধারণত ছোট ও মসৃণ জিনিস গিলে ফেললে ভয় পাওয়ার কিছু নেই। প্রায় ৮০ থেকে ৯০ শতাংশ ক্ষেত্রে এগুলো তিন দিনের মধ্যে স্বাভাবিকভাবেই হজম প্রক্রিয়ার মধ্য দিয়ে শরীর থেকে বের হয়ে যায়। কিন্তু ব্যাটারি গিলে ফেললে পরিস্থিতি সম্পূর্ণ ভিন্ন। বিশেষ করে ঘড়ি বা শ্রবণযন্ত্রে ব্যবহৃত ব্যাটারি কয়েক ঘণ্টার মধ্যেই শরীরের ভেতরে মারাত্মক ক্ষতি করতে পারে। যেকোনো ব্যাটারি শরীরের ভেতরে রাসায়নিক পোড়া ও ভারী ধাতুর বিষক্রিয়া ঘটাতে পারে। তাই ব্যাটারি গিলে ফেললে দ্রুত চিকিৎসা করানো জরুরি।
কেউ যেকোনো ধরনের ব্যাটারি গিলে ফেললে প্রথমেই জরুরি নম্বরে কল করুন। ভুলেও তাকে বমি করানোর চেষ্টা করবেন না। আর ডাক্তারের পরামর্শ ছাড়া কিছু খেতে দেবেন না। তবে হাসপাতালে পৌঁছানোর জন্য অপেক্ষা করার সময় একটি জরুরি পদক্ষেপ নিতে পারেন। যদি ব্যক্তি বমি না করে, তাহলে প্রতি দশ মিনিট পরপর এক চামচ মধু খেতে দিতে পারেন। এতে খাদ্যনালীতে একটি প্রলেপ তৈরি হবে এবং বোতামের ব্যাটারির ক্ষতিকর প্রভাব কিছুটা কমে আসতে পারে।
কেউ যদি জিঙ্কযুক্ত মুদ্রা বা কয়েন খেয়ে ফেলেন, আর পেটে দীর্ঘ সময় থাকে, তাহলে জিঙ্কের বিষক্রিয়া হতে পারে। খাদ্যনালীতে আটকে থাকা মুদ্রা ২৪ ঘণ্টার মধ্যে চিকিৎসা করে বের করে আনা জরুরি। প্লাস্টিকের মতো অন্যান্য জিনিসের ক্ষেত্রেও ধারালো বা বড় টুকরো খাদ্যনালীতে আটকে যেতে পারে বা অভ্যন্তরীণ আঘাতের কারণ হতে পারে। যদি সামান্য সন্দেহও থাকে, তবে কোনো ঝুঁকি না নিয়ে চিকিৎসকের পরামর্শ নেওয়া সবচেয়ে বুদ্ধিমানেরলেখক: শিক্ষার্থী, ঢাকা কলেজ
সূত্র: ফার্স্ট এইড গাইড কাজ।ভালো। করুন।।
Post a Comment