শিরোনামটা দেখে চট করে মাথায় আসতে পারে, দুধে আছে প্রচুর পরিমাণে ক্যালসিয়াম। হাড় মজবুত করতে দুধ খেতেই হবে। বিজ্ঞাপনে তো আমরা এমনই শুনি। শিশুর হাড় মজবুত করতে অমুক ব্র্যান্ডের দুধ খাওয়ান। প্রশ্ন হলো, পর্যাপ্ত ক্যালসিয়াম পেতে কি দুধ খাওয়া জরুরী?
শিশু-কিশোরদের বেড়ে ওঠার সময়ে বাবা-মায়েরা নিয়মিত দুধ খাওয়ান। আমাদের মধ্যে অনেকেই প্রতিদিন এক গ্লাস করে দুধ খেয়ে বড় হয়েছেন। আবার অনেকের ধারণা, সুস্থ থাকতে হলে দুধ খেতে হবে।
ক্যালসিয়ামের অভাব দূর করতে দুধ খাওয়ার প্রশ্নটি হ্যাঁ বা না দিয়ে দেওয়া যায় না। আরও কিছু কথা বাকি থাকে। প্রচলিত আছে, দুধ খেলে হাড় মজবুত থাকে। হাড় যেহেতু ক্যালসিয়াম দিয়ে গঠিত, তাই যত দুধ খাবেন, হাড় তত শক্তিশালি হবে। এক কাপ দুধে প্রায় ৩০০ মিলিগ্রাম ক্যালসিয়াম থাকে। তাই দিনে এক গ্লাস দুধ খেলে হাড় শক্তিশালী হবে, এমনটাই ভাবা হয়।
যুক্তরাষ্ট্রের হার্ভার্ড টি.এইচ. চ্যান স্কুল অব পাবলিক হেলথের মহামারীবিদ্যা ও পুষ্টি বিভাগের অধ্যাপক ওয়াল্টার উইলেট বলেছেন, ‘এই বার্তাটি স্বল্পমেয়াদী গবেষণার ওপর ভিত্তি করে তৈরি হয়েছিল। দুগ্ধ শিল্প এই ধারণাকে জোরেশোরে প্রচার করেছে।’
আমাদের দেশে বহু মানুষ ল্যাকটোজ অসহিষ্ণু। প্রায় এক-তৃতীয়াংশ মানুষের ল্যাকটোজ হজমে সমস্যা হয়। এদের কারোরই গরুর দুধ পান করা জরুরী নয়। তবে পর্যাপ্ত ক্যালসিয়াম গ্রহণ করা গুরুত্বপূর্ণ। বিশেষ করে যারা ক্যালসিয়ামের ঘাটতিতে ভোগেন। তবে গবেষণা বলছে, ক্যালসিয়ামের সমাধান একমাত্র দুধ নয়। দুধের বিকল্প ক্যালসিয়ামের বেশ কিছু হাড়ের ওপর দুধের প্রভাব
আমাদের শরীরের জন্য ক্যালসিয়াম অপরিহার্য পুষ্টি উপাদান। স্নায়ু, পেশি এবং হৃৎপিণ্ড সচল রাখতে ক্যালসিয়াম দরকার। পাশাপাশি হাড় ও দাঁতের স্বাস্থ্যের জন্যও এটি গুরুত্বপূর্ণ। একজন প্রাপ্তবয়স্ক মানুষের প্রতিদিন ১ হাজার থেকে ১ হাজার ২০০ মিলিগ্রাম ক্যালসিয়াম গ্রহণের পরামর্শ দেওয়া হয়। যদিও এই সীমা নিয়ে বিশেষজ্ঞদের মধ্যে বিতর্ক রয়েছে। যেমন, যুক্তরাজ্যে মাত্র ৭০০ মিলিগ্রাম ক্যালসিয়াম গ্রহণ করতে সুপারিশ করা হয়।
আগের ক্লিনিক্যাল ট্রায়ালগুলোতে দেখা গেছে, যে শিশু বা প্রাপ্তবয়স্করা পর্যাপ্ত ক্যালসিয়াম গ্রহণ করতেন না, তাঁরা দুধ বা সাপ্লিমেন্টের মাধ্যমে ক্যালসিয়ামের গ্রহণ বাড়ালে তাঁদের হাড়ের ঘনত্ব ৩ শতাংশ পর্যন্ত বৃদ্ধি পেয়েছিল। কিন্তু এই বৃদ্ধি আবার হাড় ভাঙার ঝুঁকি তেমন কমাতে পারেনি। এই বৃদ্ধি ধরে রাখতে প্রতিদিন অতিরিক্ত ক্যালসিয়াম খেতে হআমাদের প্রচুর ক্যালসিয়াম প্রয়োজন, এই ধারণাটি মূলত এসেছে ক্যালসিয়াম ভারসাম্যের ওপর করা স্বল্পমেয়াদী গবেষণার ভিত্তিতে। ১৯৯৯ থেকে ২০০৩ সালের মধ্যে প্রকাশিত ৭৯টি দুধ বিষয়ক গবেষণাপত্র বিশ্লেষণ করে দেখা গেছে, এক-তৃতীয়াংশের বেশি গবেষণা দুগ্ধ শিল্প থেকে অর্থায়ন পেয়েছে।
দুধ পান না করেও শরীরের হাড়গুলো শক্ত রাখা সম্ভব। এর প্রমাণ আছে। ২০২০ সালে প্রকাশিত একটি গবেষণা পর্যালোচনা অনুযায়ী, যেসব দেশের মানুষের পশ্চাতের হাড় সবচেয়ে কম ভাঙে, তারা সবচেয়ে কম দুধ পান করে। একাধিক বিশ্লেষণে দেখা গেছে, বেশি দুধ পান করার সঙ্গে হাড় ভাঙার ঝুঁকি কমার কোনো সম্পর্ক নেই।
এ ধরনের গবেষণায় দুধ পান করার সঙ্গে হাড় শক্ত রাখার কোনো সম্পর্ক প্রমাণ করা যায়নি। হাড় ভাঙাকে প্রতিরোধ করে দুধ, এটা প্রমাণ করার জন্য ক্লিনিক্যাল ট্রায়ালের প্রয়োজন। এখনো এমন কোনো পরীক্ষা করা হয়নি।
আসলে ব্যায়াম করা এবং সব মিলে কী খাবার গ্রহণ করা হচ্ছে, তার ওপর নির্ভর করে হাড়ের স্বাস্থ্য। হাড় ভাঙার ঝুঁকি কমাতে কেবল দুধের ওপর নির্ভর করা উচিশিশুদের কি বেশি দুধ খেতে হবে
বিশেষজ্ঞরা বলেন, ৯-১৮ বছর বয়সীদের বেশি ক্যালসিয়াম প্রয়োজন। একইভাবে বয়স্কদেরও প্রয়োজন বেশি দুধ খাওয়া। কারণ, ৫০ বছর বয়সের পর সাধারণত হাড়ের ঘনত্ব কমতে শুরু করে।
কারও শরীরে যদি ক্যালসিয়ামের মাত্রা কমে যায়, তখন শরীর খাবার থেকে আরও ক্যালসিয়াম শোষণ করে। তবে বয়স বাড়ার সঙ্গে এই প্রক্রিয়া দুর্বল হয়ে যায়। শরীর পর্যাপ্ত ক্যালসিয়াম না পেলে হাড় থেকে ক্যালসিয়াম টেনে নেয়। এভাবে হাড় দুর্বল হয়ে যাঅস্ট্রেলিয়ার একটি ক্লিনিক্যাল ট্রায়ালে ৭ হাজারের বেশি বয়স্ক ব্যক্তিকে দুই বছর ধরে পর্যবেক্ষণ করা হয়েছে। গবেষকরা দেখেছেন, যারা প্রতিদিন ২ কাপের পরিবর্তে ৩.৫ কাপ দুগ্ধজাত খাবার খেয়েছেন, তাঁদের পড়ে যাওয়ার ঝুঁকি ছিল ১১ শতাংশ কম। আর হাড় ভাঙার ঝুঁকি ছিল ৩৩ শতাংশ কম। তবে গবেষকরা নিশ্চিত নন, ঝুঁকি কমার কারণ কেবল শক্তিশালী হাড় নাকি অন্য কিছু।
দুধে আছে ক্যালসিয়াম, প্রোটিন, পটাশিয়াম এবং ফসফরাসের মতো পুষ্টি উপাদান। এগুলো পেতে দুধ ছাড়াও কাঁটাযুক্ত মাছ, সবুজ শাকসবজি এবং ফর্টিফায়েড ফলের রস গ্রহণ করা যেতে পারে। উদ্ভিদ-ভিত্তিক দুধ, যেমন নারকেলও এগুলোর ভালো উৎস।
দুধ থেকে পাওয়া ক্যালসিয়ামের বিকল্প হলো গাঁজানো দুগ্ধজাত পণ্য। যেমন দই এবং পনির। ল্যাকটোজে সংবেদনশীল ব্যক্তিরা এগুলো সহজে হজম করতে পারেন। হাড় ভাঙার ঝুঁকি কমাতে এগুলো দুধের চেয়ে ভালো কাজ করে। তাই যদি হজমে সমস্যা না হয়, দুধ গ্রহণ করা যেতে পারে। যদি সমস্যা হয়, তবে বিকল্প উৎস থেকে ক্যালসিয়াম সংগ্রহ করতে হবে।
লেখক: জ্যেষ্ঠ সহসম্পাদক, কিশোর আলো
সূত্র: নিউইয়র্ক টাইমসয়।ত নয়।য়।উৎস আছে।
Post a Comment