বহুদিন ধরে দাঁতের যন্ত্রণা বা মাড়ি থেকে রক্ত পড়াকে আমরা শুধুই মুখের সমস্যা হিসেবে দেখার প্রবণতা রাখি। কিন্তু চিকিৎসাবিজ্ঞান বলছে, মুখের স্বাস্থ্য ও হৃদপিণ্ডের সুস্থতার মধ্যে গভীর এবং সরাসরি সম্পর্ক রয়েছে। বিশেষ করে মাড়ির রোগ শুধু দাঁতের ক্ষতি করে না, এটি নীরবে হৃদরোগ ও স্ট্রোকের ঝুঁকি বাড়াতে পারে।মুখ ও হৃদরোগের সম্পর্কমুখে প্রায় ৭০০ প্রজাতির ব্যাকটেরিয়া বাস করে। মুখের পরিচ্ছন্নতা না রাখলে দাঁতের গোড়ায় ও মাড়িতে খাদ্যকণা জমে ‘প্ল্যাক’ তৈরি হয়। এই প্ল্যাকে থাকা ব্যাকটেরিয়া মাড়িতে সংক্রমণ ঘটায়, যার ফলে ‘জিনজিভাইটিস’ হয়। মাড়ি ফুলে যায় এবং ব্রাশ করার সময় রক্তপাত হয়।
যদি জিনজিভাইটিসের চিকিৎসা না করা হয়, তা আরও গুরুতর অবস্থায় পরিণত হয়, যা ‘পেরিওডোনটাইটিস’ নামে পরিচিত। এই অবস্থায় সংক্রমণ মাড়ির গভীরে গিয়ে দাঁত ধরে রাখার হাড় ও টিস্যু ক্ষতিগ্রস্ত করে।
ঝুঁকি বাড়ার প্রক্রিয়া
১. অ্যাথেরোস্ক্লেরোসিস: মাড়ির ব্যাকটেরিয়া রক্তে প্রবেশ করে ধমনীতে জমে থাকা কোলেস্টেরলের সঙ্গে যুক্ত হতে পারে। এর ফলে ধমনী সরু ও শক্ত হয়ে যায়, যা হার্ট অ্যাটাকের ঝুঁকি বাড়ায়।
২. প্রদাহ বৃদ্ধি: ব্যাকটেরিয়া রক্তে প্রবেশ করলে শরীর প্রদাহ সৃষ্টিকারী প্রোটিন তৈরি করে। এটি সারা শরীরে ছড়িয়ে পড়ে এবং রক্ত জমাট বাঁধার ঝুঁকি বাড়ায়, যা স্ট্রোক ও হার্ট অ্যাটাকের কারণ হতে পারে।
৩. এন্ডোকার্ডাইটিস: বিরল হলেও ব্যাকটেরিয়া হৃদপিণ্ডের আস্তরণে সংক্রমণ ঘটিয়ে ভাল্ভ ক্ষতিগ্রস্ত করতে পারে।
ঝুঁকিপূর্ণ গ্রুপ
হৃদরোগ, ডায়াবেটিস, উচ্চ রক্তচাপ বা ধূমপান যাদের অভ্যাস রয়েছে, তাদের ক্ষেত্রে মুখের অস্বাস্থ্যকর অবস্থা ঝুঁকি আরও বাড়িয়ে দেয়।
প্রতিরোধের উপায়
নিয়মিত ব্রাশ ও ফ্লস: দিনে অন্তত দু’বার সঠিকভাবে ব্রাশ করা ওডেন্টাল চেক-আপ: বছরে অন্তত দুইবার দাঁতের চিকিৎসকের কাছে মুখ ও মাড়ি পরীক্ষা করানো।
স্বাস্থ্যকর জীবনযাপন: ধূমপান ও তামাকজাত দ্রব্য বর্জন, সুষম পুষ্টিকর খাবার গ্রহণ।
সচেতনতা: মাড়ি থেকে রক্তপাত, দুর্গন্ধ, দাঁত আলগা বা মাড়ি ফুলে যাওয়া হলে অবিলম্বে চিকিৎসকের পরামর্শ নিন।
মুখের সঠিক যত্ন শুধু দাঁত নয়, হার্টও সুস্থ রাখে। তাই নিয়মিত দাঁত মাজা আর ডেন্টাল চেকআপকে নিত্যদিনের অভ্যাসে পরিণত করা জরুরি। ফ্লস ব্যবহার করা।
Post a Comment