একজন মানুষ প্রকৃত মুমিন হিসেবে গণ্য হওয়ার জন্য তার মধ্যে যেসব গুণগুলো থাকা আবশ্যক, তার মধ্যে অন্যতম হলো, আল্লাহভীতি, সদাচরণ ও উত্তম চরিত্র। এগুলোকে বলা যায়, বান্দার সার্বক্ষণিক ইবাদত। কারণ পাঁচ ওয়াক্ত নামাজ পড়তে মানুষের দিনের ১ থেকে দেড় ঘন্টার বেশি সময় লাগে না, অতএব বলা যায়, মানুষ সাধারণত নামাজের মাধ্যমে ১ থেকে দেড় ঘণ্টার বেশি সময় ইবাদতে থাকে। কেউ যদি কোরআন তিলাওয়াত করে, তাহলে হয়ত সে এই কাজের মাধ্যমে সর্বোচ্চ এক ঘণ্টা ইবাদতে থাকে, ২৪ ঘণ্টা অনবরত জিকির করাও সাধারণত সম্ভব হয় না। তাহলে কি মানুষ এই সময়গুলোর বাইরে ইবাদতের বাইরে থাকবে? না, কিছু কাজ বা অভ্যাস এমন আছে, যেগুলোর মাধ্যমে মানুষ সার্বক্ষণিক ইবাদতে থাকার সুযোগ পায়। সেগুলো হলো, আল্লাহভীতি, যা সার্বক্ষণিক অন্তরকে ইবাদতে রাখে, গুনাহ থেকে বিরত রাখে। সদাচরণ, যাকে আমরা স্বাভাবিক জীবনের অংশ মনে করলেও ইবাদতের নিয়তে মানুষের সঙ্গে সহনশীল আচরণ করে ইবাদতের সওয়াব পাওয়ার সুযোগ পাওয়া যায়। উত্তম চরিত্র, যা মানুষের নিঃশ্বাস যতক্ষণ আছে, ততক্ষণ রক্ষা করে চলা আবশ্যক। এটাও ইবাদতের অংশ। কেউ যদি এই গুণ ও কাজ করতে পারে, তাহলে তার জন্য জান্নাতের পথ সহজ হয়ে যায়।
হাদিস শরীফে ইরশাদ হয়েছে, আবু হুরায়রা (রা.) বলেন, রাসুলুল্লাহ (সা.)-কে প্রশ্ন করা হলো, কোন কর্মটি সবচাইতে বেশি পরিমাণ মানুষকে জান্নাতে নিয়ে যাবে।
তিনি বলেন, আল্লাহভীতি, সদাচার ও উত্তম চরিত্র। আবার তাঁকে প্রশ্ন করা হলো, কোন কাজটি সবচাইতে বেশি পরিমাণ মানুষকে জাহান্নামে নিয়ে যাবে। তিনি বলেন, মুখ ও লজ্জাস্থান। (তিরমিজি, হাদিস : ২০০৪)
মানুষ সাধারণত মুখ ও লজ্জাস্থানের তাড়নায় এই গুণগুলো ধরে রাখতে পারে না। মানুষের সঙ্গে খারাপ ব্যবহার করে বসে, অশ্লীল কথাবার্তা বলে বসে আবার লজ্জাস্থানের চাহিদা মেটাতে গিয়ে কখনো কখনো চারিত্রিক পবিত্রতা হারিয়ে ফেলে, যার সবকটি ইসলামের দৃষ্টিতে নিষিদ্ধ কাজ। তাই মহানবী (সা.) তাঁর উম্মতদের এই অঙ্গগুলোর ব্যাপারে বিশেষ ভাবে সতর্ক করেছেন।
অন্য হাদিসে ইরশাদ হয়েছে, সাহাল ইবনে সাদ (রা.) থেকে বর্ণিত, রাসুলুল্লাহ (সা.) বলেছেন, যে ব্যক্তি তার দুই চোয়ালের মাঝের বস্তু (জিহ্বা) এবং দুই উরুর মাঝখানের বস্তু (লজ্জাস্থান) এর জামানত আমাকে দিবে, আমি তাঁর জান্নাতের জিম্মাদার। (বুখারি, হাদিস : ৬৪৭৪)
সুবহানাল্লাহ, আমরাও যদি তাকওয়া ও সত্চরিত্রের মাধ্যমে সার্বক্ষণিক ইবাদতে নিয়োজিত থাকতে চাই, তাহলে আমাদেরও উচিত, এই অঙ্গগুলোকে নিয়ন্ত্রণ করার পাশাপাশি অন্তরে আল্লাহর প্রতি ভয় ও ভালোবাসা সৃষ্টি করা। মহানবী (সা.)-কে সবকিছুর ওপর প্রাধান্য দিয়ে তাঁর সুন্নত মোতাবেক জীবন গড়ার চেষ্টা করা। ইনশাআল্লাহ, এর মাধ্যমে আমাদের জীবনের প্রতিটি স্বাভাবিক কাজও ইবাদতে পরিণত হবে। মহান আল্লাহ আমাদের জন্য জান্নাতের পথ সুগম করবেন।
Post a Comment