ধূমপান যে স্বাস্থ্যের জন্য ক্ষতিকর, তা আমরা সবাই জানি। কিন্তু সিগারেট আমাদের ফুসফুসের ভেতরে ঠিক কী ধরনের ক্ষতি করে, সেই সম্পর্কে অনেকেরই স্পষ্ট ধারণা নেই। সিগারেটের প্রতিটি টানে প্রায় ৭,০০০ রাসায়নিক পদার্থ ফুসফুসে প্রবেশ করে, যার মধ্যে কমপক্ষে ৭০টি ক্যানসার সৃষ্টিকারী।ফুসফুসের ভেতরের ক্ষতি
১. শ্বাসতন্ত্রের ক্ষতি: সিগারেটের ধোঁয়া যখন ফুসফুসে প্রবেশ করে, তখন প্রথমে তা শ্বাসনালীর ভেতরের পাতলা আবরণে থাকা সিলিয়া-কে ক্ষতিগ্রস্ত করে। সিলিয়া হলো ক্ষুদ্র চুলের মতো অংশ যা ক্ষতিকর ধূলিকণা এবং জীবাণুকে ফুসফুস থেকে বের করে দিতে সাহায্য করে। ধূমপানের ফলে সিলিয়া পক্ষাঘাতগ্রস্ত হয়ে পড়ে বা সম্পূর্ণ নষ্ট হয়ে যায়, ফলে ফুসফুসে ক্ষতিকর পদার্থ জমা হতে থাকে২. দীর্ঘস্থায়ী প্রদাহ: সিগারেটের রাসায়নিক পদার্থগুলো ফুসফুসের ভেতরে দীর্ঘস্থায়ী প্রদাহ সৃষ্টি করে। এই প্রদাহের ফলে শ্বাসনালী ফুলে যায় এবং সংকীর্ণ হয়ে পড়ে, যা শ্বাস নেওয়া কঠিন করে তোলে। এটি ক্রনিক অবস্ট্রাকটিভ পালমোনারি ডিজিজ (COPD)-এর মতো রোগের প্রধান কারণ।
৩. অ্যালভিওলাইয়ের ক্ষতি: ফুসফুসের ভেতরে অ্যালভিওলাই নামক ছোট ছোট বায়ুথলি থাকে, যা রক্তে অক্সিজেন সরবরাহ করে। ধূমপানের ফলে এই বায়ুথলিগুলো ক্ষতিগ্রস্ত হয় এবং ধীরে ধীরে ভেঙে যায়। একবার ভেঙে গেলে তা আর পুনরুদ্ধার হয় না, ফলে ফুসফুসের অক্সিজেন গ্রহণ করার ক্ষমতা কমে যায়।
৪. কার্বন মনোক্সাইডের প্রভাব: সিগারেটের ধোঁয়ায় থাকা কার্বন মনোক্সাইড রক্তের অক্সিজেন পরিবহন ক্ষমতা কমিয়ে দেয়। কার্বন মনোক্সাইড রক্তে অক্সিজেনের চেয়ে দ্রুত মিশে যায়, যার ফলে শরীরের গুরুত্বপূর্ণ অঙ্গগুলো, যেমন— মস্তিষ্ক ও হার্টে, পর্যাপ্ত অক্সিজেন পৌঁছায়৫. ক্যানসারের ঝুঁকি: সিগারেটের রাসায়নিক পদার্থগুলো ফুসফুসের কোষের ডিএনএ পরিবর্তন করে। এই পরিবর্তিত কোষগুলো অস্বাভাবিকভাবে বৃদ্ধি পেতে থাকে এবং শেষ পর্যন্ত ফুসফুসের ক্যানসার সৃষ্টি করে। এটি ধূমপানের সবচেয়ে ভয়ংকর পরিণতিগুলোর একটি।
ধূমপানের কারণে ফুসফুসের এই ক্ষতিগুলো নীরবে চলতে থাকে এবং যখন লক্ষণগুলো প্রকাশ পায়, তখন প্রায়শই অনেক দেরি হয়ে যায়। তাই, নিজের ফুসফুস এবং সামগ্রিক স্বাস্থ্য সুরক্ষার জন্য ধূমপান ত্যাগ করা অত্যন্ত জরুরি।
Post a Comment