ডেঙ্গুর প্রকোপ এখনো কমেনি। দেশের প্রতিটি শহর ও গ্রামে এ রোগের ভয়াবহতা প্রতিনিয়ত বৃদ্ধি পাচ্ছে। ডেঙ্গুতে মৃত্যুর অন্যতম কারণ হেমোরেজিক ফিভার ও ডেঙ্গু শক সিনড্রোম। এই দুই জটিলতা তৈরির মূল কারণ রক্তনালির দেয়াল দুর্বল হয়ে অনিয়ন্ত্রিতভাবে রক্ত থেকে প্লাজমা বের হয়ে যাওয়া।প্লাজমা শরীর থেকে বের হয়ে যাওয়ায় শরীরে পানির পরিমাণ কমে যায়, সৃষ্টি হয় পানিশূন্যতা। তীব্র পানিশূন্যতার ফলে দেহের বিভিন্ন গুরুত্বপূর্ণ অঙ্গ কার্যকারিতা হারিয়ে রোগীরা মৃত্যুর দিকে ধাবিত হয়। ডেঙ্গুর এই দুটি জটিলতা সৃষ্টি ও এর থেকে সৃষ্ট বিভিন্ন উপসর্গ কমাতে ভিটামিন ডি গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখে। মানবদেহের রোগ প্রতিরোধক্ষমতাকে নিয়ন্ত্রণ করে ভিটামিন ডি।এটি বিভিন্ন ধরনের জীবাণু এবং অন্যান্য ক্ষতিকর প্রতিরোধ ও দ্রুত রোগমুক্তিতে ভূমিকা রাখে।
তীব্র ডেঙ্গুতে শরীরে অতিরিক্ত ভাইরাস লোড তৈরি হয়। এর ফলে দেহের বিভিন্ন কোষ থেকে অতিমাত্রায় নিঃসরিত হয় সাইটোকাইন। এটি প্রো-ইনফ্লেমেটরি অর্থাৎ দেহে অ্যালার্জিক রি-অ্যাকশন তৈরি করে।
ডেঙ্গু হেমোরেজিক ফিভার ও শক সিনড্রোমের জন্য বিশেষভাবে দায়ী সাইটোকাইন নিঃসরণ।
ভিটামিন ডি মানবদেহে ডেঙ্গু আক্রান্ত কোষের পরিমাণ কমায়, যা প্রকারান্তরে বিভিন্ন ধরনের প্রো-ইনফ্লেমেটরি পদার্থ; যেমন—সাইটোকাইনের নিঃসরণ কমায়। ফলে দেহে ডেঙ্গুর তীব্রতা হ্রাস পায়। আমাদের দেশের প্রায় ৭৫ থেকে ৯০ শতাংশ মানুষ কোনো না কোনোভাবে ভিটামিন ডি স্বল্পতায় ভুগছে। সুস্থ ব্যক্তিদের দেহেও ভিটামিন ডি-এর মাত্রা সার্বিকভাবেডেঙ্গু রোগীদের মধ্যে চালানো দুটি পৃথক গবেষণায় দেখা গেছে, যাদের এক ডোজ করে দুই লাখ ইউনিট ভিটামিন ডি সাপ্লিমেন্ট দেওয়া হয়েছে, তাদের মধ্যে তীব্র ডেঙ্গু হওয়ার আশঙ্কা অন্যদের তুলনায় অনেকটাই কম।
শরীরের মোট চাহিদার ৮০ শতাংশ ভিটামিন ডি জোগান দেয় সূর্যের আলো। এর বাকি ২০ শতাংশ আমরা পেতে পারি খাদ্য থেকে; যেমন—ছোট মাছ, মাগুর, স্যালমন মাছ, দুধ ও ডিম। দেহে ভিটামিন ডি-এর চাহিদা পূরণ করতে হলে অবশ্যই ত্বকে সরাসরি রোদ লাগাতে হবে। দীর্ঘ সময়েরও প্রয়োজন নেই, গড়ে প্রতিদিন ২০ থেকে ৩০ মিনিট সূর্যের আলোতে থাকলেই হবে। প্রতিদিন সকাল ১০টা থেকে দুপুর ২টার মধ্যকার সময়ের রোদ ভিটামিন ডি-এর খুব ভালো উৎস। পোশাক বা সানস্ক্রিন সরাসরি ত্বকে ভিটামিন ডি তৈরিতে বাধা দেয়। তাই মুখে সানস্ক্রিন মেখে বের হলেও হাত-পা বা শরীরের অন্য কোনো স্থান যেন উন্মুক্ত থাকে সেদিকে খেয়াল রাখতে হবে। ভিটামিন ডি-এর সঙ্গে যেহেতু রোগ প্রতিরোধক্ষমতা সরাসরি সম্পর্কিত, তাই দেহে পর্যাপ্ত ভিটামিন ডি সরবরাহ করা হলে ডেঙ্গুর পাশাপাশি অন্যান্য রোগের প্রকোপও কমে যাবে। তবে মনে রাখা জরুরি, অনিরাপদভাবে অতিরিক্ত রোদ পোহালে উল্টো ত্বকের ক্ষতি হওয়ার আশঙ্কা থাকে। চড়া রোদের মধ্যে থাকা যাবে না। রোদ পোহানোর সময় অবশ্যই সঙ্গে পানি রাখতে হবে। নইলে পানিশূন্যতা হতে পারে।
লেখক : মেডিসিন ও বক্ষব্যাধি বিশেষজ্ঞ
হেলথকেয়ার ডায়াগনস্টিক সেন্টার লিমিটেড কম।
Post a Comment